একের পর এক চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত ধূপগুড়ির ব্যবসায়ীরা
সুব্রত রায়, ধূপগুড়ি: শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র একের পর এক চুরির ঘটনায় আতঙ্কিত গৃহস্থ থেকে ব্যবসায়ী। তস্করের ভয়ে তটস্থ ধূপগুড়ি সহ ডুয়ার্সের মহল্লা থেকে শহরের অলিগলির ব্যবসায়ী থেকে গৃহস্থ। এই যেমন গত এক মাসে শুধুমাত্র ধূপগুড়ি শহরে কুড়ি থেকে পঁচিশটির মত চুরির ঘটনা ঘটেছে। ছিঁচকে চোর থেকে আন্তঃরাজ্য পাচারকারী কারো কালো হাতের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না ডুয়ার্সবাসী। পুলিশ যেমন সাফল্য পেয়েছে তেমনি কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে চুরির কিনারা হদিস করতে। ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষোভে ফুঁসছেন প্রশাসনের উপর। বিশেষ করে গ্রামের চেয়ে শহরে পুলিশি টহল চলা সত্ত্বেও যখন চুরির ঘটনা ঘটছে।
যেমন ২২ সেপ্টেম্বর ভোরে ধূপগুড়ি শহরের মশলাপট্টির একটি দোকান থেকে চুরি হয়। আবার ঐ একই দিনে শহর থেঘঘে ছয় কিমি দূরে থাকা কদমতলা বাজারে দুটি দোকানে চুরি হয়। অন্যদিকে গ্রামে গঞ্জে গরু, ছাগল চুরির ঘটনা তো আছেই। সবমিলিয়ে প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চুরির ঘটনা। গাদংয়ের একটি সোনার দোকানে চুরির ঘটনায় পুলিশ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে, ঝালটিয়া বাজারে মোবাইল চুরির অপরাধে গ্রেপ্তার হয় এক উঠতি বয়সী। তবে দোকানদারদের অভিযোগ পুলিশ অনেক সময় দোকানে ঘটে যাওয়া চুরির ঘটনায় অভিযোগ নিতে চাননা। এমনকি তদন্তের স্বার্থে চুরি যাওয়া দোকানে আসতে চাননা পুলিশকর্মীরা। কদমতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজকুমার রায় অভিযোগের সুরে জানালেন, “এ মাসের ৫ তারিখ কদমতলা বাজারে দুটি দোকানে চুরি হয়। ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশের তরফ থেকে তদন্ত করে দেখা হয়নি।” তিনি জানান, “ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে পুলিশের টহলদারির কথা বলা হলেও বাস্তবে তা নেই। এভাবে চুরির ঘটনা চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামতে হবে আমাদের।”
লকডাউনের সময় একদিকে কাজের অভাব অন্যদিকে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি গরিব মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি সরকার অভিযোগ বাম মনোভাবাপন্ন বিরোধী দলগুলির। তাদের দাবি, গরিব ও বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে না দিয়ে উপঢৌকনের রাজনীতি চলছে কেন্দ্র ও রাজ্যে। নাম মাত্র উপঢৌকন দিয়ে গরিব মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে দুই সরকার। তার ফসল হলো চুরির ঘটনা বৃদ্ধি। তাদের দাবি কেন্দ্র সরকারের মুক্ত বাজার নীতি গরিব মানুষকে আরো দরিদ্র করে তুলবে। তবে আন্তঃরাজ্য বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় পাচার চক্রের ব্যাপারে তাদের ভিন্ন মত রয়েছে। তাদের দাবি এর পেছনে রাষ্ট্রীয় মদত এমনকি সরকারি দলের নেতা মন্ত্রীরা দায়ী। তারা দিয়ে বলছেন, আন্তঃরাজ্য বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় পাচার চক্রের বিরুদ্ধে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে, অপরদিকে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে সন্ধ্যাবেলা আস্ত একটি বাস ছিনতাই করেছে দুস্কৃতিরা। যদিও ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জলপাইগুড়ি পুলিশ পাঁচ দুস্কৃতিকে ধরে ফেলে। তবে গ্রামেগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাজ বেশ চওড়া হচ্ছে। তারা পরিসংখ্যান দিয়ে জানালেন, গত জুলাই মাস থেকে ধূপগুড়ি ব্লকের ডাংডরি বাজারের পাঁচটি দোকান, সোনাতলা হাটের একটি ইলেকট্রিক দোকান, শালবাড়ি বাজারের একটি জেরক্স দোকান, কালিরহাটের একটি দোকানে সিসিটিভি ফুটেজের হার্ডডিস্ক সহ চুরি, শালবাড়ি বাজারের পাশের একটি বাড়ি থেকে বাইক চুরি, গাদং ২ গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নতুন বাজারে সাটার ভেঙ্গে গালামাল দোকানে চুরি, গাদং ১ গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এলাকায় সোনার দোকানে চুরি যায়। এইসব ঘটনায় পুলিশ খুব কম সাফল্য পেয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ী রতন দাস জানান, “আমরা সবাই চোরের আতংকে রয়েছি। একমাসে বাজারে দুইবার চুরি হলেও পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তে আসেনি।” পরপর চুরির ঘটনায় ব্যবসায়ীরা এতটাই আতংকিত যে নিজেরাই রাতে পাহাড়া দেওয়ার কথা ভাবছেন। ব্যবসায়ী রঞ্জন দাস জানান, ” ছাদের উপরে থাকা দোকানে যদি চুরি যায় তাহলে যাদের নিচে দোকান রয়েছে তাদের কি অবস্থা হবে। পরপর চুরি হয়ে যাচ্ছে অথচ পুলিশ প্রশাসন ঘুমিয়ে রয়েছে । এখন সারাদিন ব্যবসা করার পর রাতে কি পাহারা দেওয়া সম্ভব?”
সামনে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। তার আগে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে ব্যবসায়ীদের মনের ভেতর আতঙ্ক ক্রমশ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনিতেই পুজোর মুখে নতুন জামাকাপড় এখনো সেই অর্থে নিয়ে আসেননি দোকানদাররা। চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেলে ব্যবসা বন্ধ রাখা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।