ঐতিহাসিক হুসেন দিঘির কথা

জয়দেব গোপ, চোপড়া: চারদিকে চা বাগান,সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া,ওপারে বয়ে চলেছে করতােয়া।আর এখানেই নীরবে শুয়ে আছে সুলতানি আমলের নিদর্শন শুসেন দিঘি । এই দিঘি ঘিরে রয়েছে বহু মিথ , লােককথা , প্রবাদ প্রবচন ও গল্পসল্প । এক সময় এই দিঘি জড়িয়ে থাকত এলাকাবাসীর ধর্মীয় আচরণ , জীবন জীবিকা । ইতিহাসের আলােকে হুসেন দিঘির ব্যাপারে জানতে গেলে জনশ্রুতিই এখন ভরসা । চোপড়া থানার ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের বাবুগছ এলাকায় এই ঐতিহাসিক হুসেন দিঘি আবিষ্কৃত হয় । প্রায় চার একর জমির উপর এইদিঘি , গভীরতা স্থানীয়দের কাছে অজানা । সৎকারের অভাবে দিঘিটি নাব্যতা হারাতে বসেছে । কথিত আছে গৌরের সুলতান হুসেন শাহ কামরূপ রাজ্য অভিযানে এলে খরস্রোতা করতােয়া নদীর ধারে এসে সমস্যায় পড়েন । এখানে কিছুকাল অবস্থান কালে সৈন্যদের কায়িক পরিশ্রমে এই দিঘি খনন করা হয় । পরবর্তীতে দিঘিটি এলাকাবাসীকে উৎসর্গ করা হলে এই দিঘির নামকরণ করা হয় হুসেন দিঘি । এক সময় এই জায়গায় ঘন জঙ্গল ছিল । কৃষিকার্যহ ছিল এখানকার প্রধান জীবিকা । তবে দিঘি এলাকার জঙ্গলে শিকারও চলত । শীতকালে জঙ্গলের কাঠে আগুন পােহানাে যেমন চলতাে তেমনি কাঠ সংগ্রহ করে এলাকার বিভিন্ন হাটে বাজারে জ্বালানি হিসেবে বিক্রিও করা হত । প্রতি বছর ১ লা বৈশাখে দিঘির পাড়ে জমজমাট মেলা বসত । জৌলুস হারালেও প্রতি বছর ১ লা বৈশাখে এখনও হুসেন দিঘির মেলা বসে । দিঘিকে ঘিরে ধর্মীয় আচার আচরণ , মনকামনা পূরনের জন্য মানত করা চলতাে যথারীতি । উত্তর দিনাজপুর জেলায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য দিঘি , পুকুর , জলাশয় এবং এ সমস্ত ঘিরে জড়িয়ে আছে বহু লােককথা , জনশ্রুতি ; তবে কেন দিঘিকে ঘিরে এলাকায় স্থানীয় প্রবাদ ও যে থাকতে পারে আলােচ্য নিবন্ধে এই প্রবাদ নিয়েই আলােকপাত এবং মূল প্রেক্ষাপট হিসেবে প্রধাণ্য দেওয়া হয়েছে । হুসেন দিঘি নিয়ে স্থানীয় বহুল প্রচারিত প্রবাদটি হল ‘ হুসেন দিঘির ভরসা । আজও এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবাদ বাক্যটি শােনা যায় । এই প্রবাদ কী । তাহলে মূলত দিঘিকে ঘিরে ধর্মীয় আচার আচরণ নিয়ে সৃষ্টি চাওয়া পাওয়ার নিরিখে নাকি অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রবাদটি প্রচলিত ? এ প্রসঙ্গে নিদৃিষ্ট কোন একটি যুক্তি জনসাধারণের কাছে বিশ্বাসযােগ্য করে দাঁড় করানাে মুশকিল । হয়তাে অনেকেই নিজেদের দৃষ্টিতে হুসেন দিঘির উপর ভরসা রাখতেন । হয়তাে এখনও কেউ এখনও কেউ সেই ভরসা আগলে রেখেছেন । বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এ ব্যাপারে আলােচনা করতে হলে প্রাসঙ্গিক কয়েকটি বিষয় অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ । এলাকার একাংশ মানুষ কাঠ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । ১ লা বৈশাখের মেলায় ব্যবসায়ীদের অনেকেই লাভবান হতেন । বিস্তৃত এই দিঘির জল পানীয় এবং বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতাে । হয়তাে অনেকের ধারণা এখানে অনেকের মনস্কামনা পূরণ হতাে । তবে হুসেনদিঘি যে এলাকা বাসীর কাছে কল্যানকর ছিলাে এটা কোনভাবেই অস্বীকার করা যাবে না । বর্তমানে দিঘিটি প্রশাসনিক উদ্যোগে সংস্কারকার্য করে এটাকে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তােলা যেতে পারে । চারদিকে সবুজঘেরা চা বাগান , দিঘিরপাড়ে উদ্যান ও বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী সাজিয়ে যেমন মন্ত্রমুগ্ধ করে তােলা যেতে পারে পাশাপাশি সরকারিভাবে মাছ চাষেরও উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে । আর তা না হলে হয়তাে এই ঐতিহাসিকনিদর্শনটি বিলিন হয়ে যেতে পারে !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *