ঐতিহ্যবাহী দোল মেলা

ক্ষীরোদা রায়, ফালাকাটাঃ স্যাটেলাইট চ্যানেল বা সোশ্যাল মিডিয়ার দৌরাত্ম্য তখন এতটা ছিল না। জাতপাত, ধর্মের বেড়াজাল ডিঙিয়ে গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে নিছক বিনোদন নয়, তথ্য প্রচার ও জ্ঞানের বিকাশে খগেনহাট খিলকদমতলা চান্দির লীলাহাটি ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সেই আকর্ষণ অবশ্য একটুকুও কমেনি। সোশ্যাল মিডিয়া বা স্যাটেলাইট চ্যানেলের রমরমা বাজারে বিশ্ব যখন হাতের মুঠোয় তখন মাটির মূর্তিতে লীলা প্রদর্শনীর গুরুত্ব এখনও কমেনি চান্দির লীলাহাটির সৌজন্যে। বরং মাটির প্রতিমা তৈরির কারিগররাই হারিয়ে যেতে বসেছেন কালের নিয়মে। অতীত ঐতিহ্য ও আধুনিকতাকে মিশিয়ে খগেনহাট চান্দির লীলাহাটি আজও সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে।

কমিটির অন্যতম কার্যকর্তা পবিত্র রায় বলেন, “এখানে প্রচুর লোকসমাগম হয়। উত্তরবঙ্গে ঐতিহ্যবাহী দোলের মেলা গুলির মধ্যে চান্দির লীলাহাটি অন্যতম। একসময় লীলা প্রদর্শনীর মাধ্যমে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে তুলে ধরা হয়। মাটির মূর্তি দিয়েই সেই সব দৃশ্য তুলে ধরা হয়।” রাজীব গান্ধীর হত্যা কিংবা গাইসালের দূর্ঘটনা বা বিভিন্ন মানি মার্কেটিং সংস্থায় টাকা রেখে সর্বস্বান্ত মানুষের দূর্দশা সহ বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হতো দর্শকের সামনে। স্যাটেলাইট চ্যানেল বা সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা যে সময় ছিল না চান্দির লীলাহাটি ছিল তখন মানুষের আর্থ-রাজনৈতিক, সামাজিক চেতনা বিকাশের মাধ্যম। কমিটির সভাপতি সগেন রায় বলেন, উত্তরবঙ্গের সেরা মৃৎশিল্পী কন্টেশ্বর বর্মন লীলাহাটিতে মূর্তি গড়ার কাজ করে আসছেন বহু বছর ধরে। তাঁর চেষ্টা ও উদ্যোগকেও আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় মেলার কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় ভূ-স্বামী চন্ডিচরণ রায় ও রাজকুমার রায় নামে দুই ভাই ৬৭ বছর আগে দোল পূর্ণিমার সময় এই মেলা চালু করেন। তখন দোলসোয়ারিতে পুজো দেওয়া হতো। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর সার্বজনীন ভাবে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সেখানে স্থায়ী মন্দির রয়েছে, তৈরি করা হচ্ছে ক্লাব ঘর। সরকারি অনুদান পেয়ে থাকে মেলা কমিটি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সামাজিক কাজ করেছে মেলা কমিটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *