করোনায় মৃত পিতার মুখাগ্নি করলো পুলিশ আধিকারিক, চিতাভস্ম পেলেন পূত্রেরা
রাহুল দেব বর্মন, সাহেবগঞ্জ – কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে পিতার, সরকারি নিয়মে পিতার শেষকৃত্য করতে পারবেন না পূত্রেরা। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত সমস্যা দাহকার্য করা নিয়ে জটিলতা। ২৯ শে জুলাই মৃত্যু হয়েছে কৃষ্ণানন্দ অধিকারীর। ৩০শে জুলাই মৃতদেহ সৎকার করতে পুলিশের কালঘাম ছুটে গিয়েছে শ্মশান খুঁজতে। শেষমেশ দেশের সীমান্তের পার্শ্ববর্তী শ্মশানে হলো মৃতদেহ দাহ কাজ। পূত্রেরা উপস্থিত হতে পারেননি, তাই ঐ বৃদ্ধের মুখাগ্নি সদ্য পিতৃহারা পুলিশ আধিকারিক হেমন্ত শর্মা।
দিনহাটা ২নং ব্লকের বুড়িরহাট ১নং অঞ্চলের ভুলকি গ্রামের এক কোভিড আক্রান্ত বৃদ্ধর মৃত্যু হয় গত ২৯ জুলাই।
এরপর গত ৩০ জুলাই সেই বৃদ্ধের মৃতদেহ সৎকার নিয়ে বহু শ্মশানে ঘুরতে হয় দিনহাটা ২নং ব্লকের প্রশাসনের উচ্চ আধিকারিকদের।
অবশেষে গভীর রাতে সাহেবগঞ্জ এর সীমান্তবর্তী এলাকার এক শ্মশানে সেই বৃদ্ধের মৃতদেহের সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে সাহেবগঞ্জ পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসন।
কোভিড পরিস্থিতিতে এবং করোনায় আক্রান্ত থাকার জন্য শেষকৃত্য হাজির হতে পারেননি মৃত বৃদ্ধার পরিবার পরিজন এবং কোনো আত্মীয় স্বজন ।
নিজেদের কেউ উপস্তিত না থাকার কারণে দিনহাটা সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ আধিকারিক হেমন্ত শর্মা নিজেই মুখাগ্নি করেন ।
সদ্য পিতৃহারা হেমন্ত বাবু বুঝতে পারেন মাথার উপর থেকে পিতার ছাদ সরে যাওয়া কতটা মানসিক যন্ত্রনা , এমনকি দাহকার্য্য শেষে হিন্দু রীতি মেনে সেই চিতাভস্ম নিজে যত্ন করে এনে রেখে দেন থানার মালখানাতে ।
মালখানা হল থানার সেই সুরক্ষিত ঘর যেখানে বাজেয়াপ্ত করা সমস্ত বস্তু এবং মূল্যবান জিনিস এমনকি কোন অপরাধে ব্যবহত অস্ত্রশস্ত্রও থাকে I
নিজে যত্ন করে সেই সুরক্ষিত ঘরে রেখে দেন মৃত বৃদ্ধার সৎকারের চিতাভস্ম।
আজ সকালে মৃতের বড় পুত্র বিবেকানন্দ অধিকারী থানায় এসে নিজের পরিচয় দেন এবং সেই সযন্তে সুরক্ষিত চিতাভস্ম হেমন্ত বাবুর হাত থেকে গ্রহণ করেন ।
পিতৃহারা পুত্র কোভিদ আবহে এই পবিত্র চিতাভস্ম নিজের হাতে পেয়ে আবেগে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি ।
এরপর বিবেকানন্দ অধিকারী বারংবার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হেমন্ত শর্মাকে তথা কোচবিহার জেলাপুলিশ প্রশাসনকে এই কোভিড আবহে মানবিকতার ও দায়িত্বশীলতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য I
কোচবিহার পুলিশের মানবিক মুখের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি আজ সারা জেলায় তথা গোটা পশ্চিমবঙ্গে সুপরিচিতির নিদর্শন ।
কিন্তু আত্মীয় স্বজন বিহীন এক কোভিদ আক্রান্ত মৃতদেহের মুখাগ্নি থেকে শুরু করে সমস্ত রীতিনীতি মেনে দাহকার্য্য সম্পন্ন করে সুরক্ষিত চিতাভস্ম পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে বিরলতম নজির সৃষ্টি করল কোচবিহার জেলা পুলিশ ।
জেলা পুলিশের এই মানবিকতার নজিরকে সন্মান জানিয়েছেন সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ।