চাঁদনি কুড়ায় চাঁদনি বুড়ির পূজা অনুষ্টিত হবে শ্যামা পুজোর রাতে

ক্ষীরোদা রায়ঃ অমানিশার রাতে শ্যামা পুজোর সাথে চাঁদনি বুড়ির পুজো অনুষ্ঠিত হয় ফালাকাটার ধনীরামপুর ২ অঞ্চলের চাঁদনি কুড়ায়। চাঁদনি বুড়ির সাথে তাঁর দুই নাতনিকেও সন্তুষ্ট করা হয় পুজোর মধ্য দিয়ে।

চাঁদনি বুড়ির নাম অনুসারে ওই এলাকার নাম হয়েছে চাঁদনি কুড়া। তবে স্থানীয় ভাষায় চান্নি কুড়া বলা হয়। কুড়া শব্দের অর্থ অগভীর গহ্বর। এক সময় ডুডুয়া নদী ওই এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদী ভাঙনের ফলে তার গতিপথ বদলেছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন ঘটলে ওই এলাকায় তৈরি হয়েছে অগভীর গর্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে শোনা গেছে ওই কুড়া বা অগভীর গহ্বর জলে ভর্তি ছিল। জলের তলা থেকে সোনার চালুন বা সোনার চাইলন (একে চান্নি কুলাও বলা হয়) উঠে আসত। বাসিন্দারা বলেন, কোন শুভ কাজ অনুষ্টিত করার আগে সেখানে গিয়ে মনস্কামনা করতে হয়। তারপর সোনার চাইলন উঠে আসলে বিয়ের মত মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান আয়োজন হতো। বাসিন্দাদের দাবি, এই সবকিছুই চাঁদনি বুড়ির মাহাত্ম্য।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা শিক্ষক শ্যামল রায় বলেন, চাঁদনি বুড়ি হল রাজবংশী সমাজের লৌকিক দেবী। লৌকিক দেবদেবী ঘিরে মিথ প্রচলিত রয়েছে এবং কিছু স্থানের নামকরনের পেছনে রয়েছে এই মিথ। তিনি বলেন, চাঁদনি বুড়ির সঙ্গে তাঁর দুই নাতনির থাকার কথা বাপ, ঠাকুরদার মুখে শুনেছি। এখনও লোকে ওই স্থানে একা যেতে ভয় পায়।

স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন রায় বলেন, ঠাকুরদার মুখে শুনেছি বহুদিন আগে চাঁদনি বুড়ি তার দুই নাতনিকে নিয়ে এই এলাকায় পথ ভূলে যান। স্থানীয় এক বাসিন্দা বৃদ্ধাকেকে পথ দেখিয়ে দেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি নাতনি সহ ওই বৃদ্ধাকে দেখতে পাননি। এরপর ওই ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা দেন ওই বৃদ্ধা। তারপর থেকেই চাঁদনি কুড়ায় চালু হয় চাঁদনি বুড়ির পূজা।

চাঁদনি কুড়ায় এখনও সেই অগভীর জলাশয় রয়েছে। তবে তার ওপর ভেসে আছে ঝোপজঙ্গল। অনতিদূরেই ডুডুয়া নদী। জলাশয়ের পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেই রয়েছে ছোট্ট জঙ্গল, জঙ্গলে রয়েছে বেশ কিছু বড় বড় বৃক্ষ। বটগাছের তলে রয়েছে চাঁদনি বুড়ির মন্দির। মন্দিরে রয়েছে কচ্ছপের পিঠে চড়ে চাঁদনি বুড়ির মূর্তি। তাঁর দুদিকে আছে দুই নাতনি।

স্থানীয় বাসিন্দা তথা লীলাবতী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক পবিত্ৰ রায় বলেন, উত্তরবঙ্গের বহু জায়গার নামকরণের পেছনে রয়েছে এই ধরনের মিথ। ঋক বৈদিক সমাজের দেবদেবীদের পাশাপাশি রাজবংশী সমাজে নানান লোকদেবী রয়েছেন। তাঁদের পূজার রীতিনীতিও আলাদা। চাঁদনি বুড়ি ও সেই কুড়ার নামেই এলাকার নামকরণ হয়েছে। তবে ইদানীং অনেক জায়গার নাম পরিবর্তন হচ্ছে, আর এর সঙ্গে হারিয়ে যেতে পারে এই সমস্ত কল্পকাহিনীও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *