দিদি নন্দীগ্রামে হেরে গেছে: অমিত শাহ, বাংলায় আমি একা, আমার বিরুদ্ধে কত নেতা: মমতা
ডেস্ক রিপোর্ট: কোচবিহারের দিনহাটার জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ” ইলেকশন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করেছে না, ইলেকশন পরিচালনা করছে অমিত শাহ, নন্দীগ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনী হাঙ্গামা করেছে, বিজেপির হয়ে কাজ করেছে।” ঠিক তার ঘন্টাখানেক পরে আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি বিধানসভার সুভাষিণী চা বাগানের জনসভায় অমিত শাহ বললেন, “দিদি নন্দীগ্রামে হেরে গেছে”।
উত্তরবঙ্গে ভোট শুরু হচ্ছে ১০ এপ্রিল। নির্বাচনী প্রচারে শুরু হয়েছে হেভিওয়েটদের আনাগোনা। দিনহাটা ও ফালাকাটায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, বাংলায় আমি একা, আমার বিরুদ্ধে লড়াই করতে কত নেতা, কত এরোপ্লেন আসছে।” নির্বাচনী লড়াই শুরু হয়েছে খেলা হবে স্লোগানের মধ্য দিয়ে। নন্দীগ্রামে বুথে এজেন্ট বসাতে না পারা নিয়ে দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, কাউকে ভয় পাবেন না, আমি চুপ করে ঘড়ে বসে থাকিনা, বিজেপির মারের ভয়ে যে এজেন্ট হতে ভয় পায় তাকে এজেন্ট চাইনা, দূর্বল কাউকে চাইনা। ওদের সাথে লড়াই করতে হলে সাহস রাখতে হবে,দরকার হলে মা বোনেদের এগিয়ে আসতে বলেন তিনি।” জবাবে অমিত শাহ সমর্থকদের সামনে বলেন, দিদি বাংলার জনতাকে হুমকি দিচ্ছেন খেলা হবে, ভারতীয় জনতা পার্টি টক্কর নিতে তৈরি, ভয় পাবেন না কোন গুন্ডা আপনার ক্ষতি করতে পারবেনা।”
বিজেপির প্রতি খোঁচা মেরে তৃণমূল নেত্রী বলেন, বিজেপির নিজস্ব প্রার্থী নেই, সিপিএমের ধার করেছে, তৃণমূলের গদ্দারদের প্রার্থী করেছে। দিনহাটায় নিশীথ প্রামাণিককে উদ্দেশ্য করে বলেন, টাকা দিয়ে মনুষ্যত্ব কেনা যায় না, গুন্ডামি করবে, গুন্ডামি রুখে দিন। সাংসদ হয়ে বিধানসভা ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে নিশীথকে খোঁচা মমতার, ছিল সিংহ, হলো বেড়াল।
দুই প্রান্তে দুই শীর্ষ নেতার ভাষণের মধ্যে কর্মসংস্থান, শিল্প নিয়ে তেমন কোন প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেল না বলে রাজনৈতিক মহলের মত। বরং দুই পক্ষই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীগুলির জন্য পৃথক অ্যাজেন্ডা রেখে প্রচার চালালো। উল্লেখ্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছে, গোর্খা তথা নেপালি ভোটের কথা মাথায় রেখে অমিত শাহ নেপালি চলচ্চিত্রে ৫ কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেন, ঘোষণা করেন একটি নেপালি রেডিও চ্যানেল তৈরির। গোর্খাদের দশটি জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী মর্যাদা দেবে সরকার, ঘোষণা করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি। এমনকি রাজবংশী ভাষার স্বীকৃতি নিয়েও তিনি দিয়ে গেলেন প্রতিশ্রুতি। বললেন নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন তৈরির কথা যেখানে গোর্খা ও নেপালিরা সুযোগ পাবে। মজুরি বৃদ্ধি করা ছাড়া চা বাগানের আদিবাসীদের জন্য খুব কম শব্দ খরচ করলেন অমিত শাহ। চা-এর ঔষধি গুণের কথা ভেবে চা- পার্ক তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। বিরোধীদের প্রশ্ন চা-পার্ক তৈরি হলে চা বাগানের আদিবাসীদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে কি? উত্তরবঙ্গে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেবে মোদী সরকার অমিত শাহের এই ঘোষণা রাজবংশীদের মনে কতটা প্রভাব ফেলে এখন এটাই দেখার।
নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে গিয়ে হিন্দু মন্দিরে পূজা দেওয়া রাজ্যের মতুয়াদের নিয়ে ভোট রাজনীতি করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা দু’ নম্বরি করিনা, সারাক্ষণ ক্যা ক্যা করবে নাগরিকত্ব কেড়ে নেবে, মোদী বাবু ভোটের সময় হঠাৎ বাংলাদেশে গিয়ে বলছেন আমাদের ভোট দেন।” তবে অমিত শাহ বলেন, “মানুষ কেন, পাখিও গোপনে প্রবেশ করতে পারবেনা, শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেবে বিজেপি।”তবে উত্তরবঙ্গের জন্য দুই পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি প্রচুর পাওয়া গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে এইমস গড়ে তোলা, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন, পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের রাজনৈতিক সমস্যার অবসান, এমনকি ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি, সিন্ডিকেট ও কয়লা, বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে শাহের দাবি। অপরদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের জন্য লক্ষীর ভান্ডারে হাত খরচ, কৃষকদের একর প্রতি জমিতে দশ হাজার টাকা প্রদান, প্রান্তিক কৃষকদের পাঁচ হাজার টাকা, সমস্ত ধর্মের ছাত্রছাত্রীদের জন্য দশ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট কার্ড, বাড়িতে বাড়িতে রেশন, স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আরো বেশি ঋণ দানের প্রতিশ্রুতি দেন মমতা।
অমিত শাহের সভায় কালচিনিতে উপস্থিত ছিলেন মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মনোজ টিগ্গা, কালচিনির প্রার্থী বিশাল লামা, আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপির সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা সহ অন্যান্য কার্যকর্তাগণ। ফালাকাটায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রার্থী সুভাষ রায়, আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মৃদুল গোস্বামী, সুরেশ লালা, মনোরঞ্জন দে প্রমুখ।
আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের মেন্টর তৃণমূল কংগ্রেসের মোহন শর্মা অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিলেন কালচিনির সুভাষিণী চা বাগানের জনসভায়। বেশ কয়েক দিন ধরে জল্পনা চলছিল তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে। অবশেষে তিনি দল বদল করলেন। উল্লেখ্য, কালচিনি বিধানসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দাঁড় করানোর পর দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। ব্লকের অন্যতম নেতা অসীম মজুমদার, গণেশ অ্যালে সহ আরো কয়েকজন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বিজেপিতে যোগ দেন এইদিন।