দিদি বড়ো নেত্রী, দশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, ধুমধাম সহকারে বিদায় হবে: অমিত শাহ
সুব্রত রায় ও জগদা রায়, ধূপগুড়ি: ভোটের প্রচারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। চতুর্থ দফা ভোট শেষ। এখন পঞ্চম দফার প্রচার চলছে জোরকদমে। সোমবার উত্তরবঙ্গে প্রচারে আসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন বাগডোগড়া বিমানবন্দরে নেমে প্রথমে তিনি কালিম্পংয়ে জনসভা করেন। এরপর ধূপগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিষ্ণুপদ রায়ের সমর্থনে জনসভা করেন তিনি। সকাল থেকেই বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন বুথের কর্মী সমর্থকরা জনসভার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ধূপগুড়ির সাকোয়াঝোড়া ২ গ্ৰাম পঞ্চায়েতের ফণীর মাঠের একপাশে সভামঞ্চ এবং আর একপাশে অস্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘন্টা পরে সভাস্থলে পৌঁছান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় পিকে বন্দোপাধ্যায়কে ভূমিপুত্র সম্বোধন করে স্মরণ করার পর রাজবংশী তথা উত্তর পূর্ব ভারতের আধুনিক মানুষ মনীষী ঠাকুর পঞ্চানন বর্মাকে শ্রদ্ধা জানান। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মতমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বলেন, উত্তরবঙ্গে দিদি বহু অন্যায় করেছে, দিদি যাতে উত্তরবঙ্গে খাতা খুলতে না পারে তার দায়িত্ব থাকলো উত্তরবঙ্গের মা বোনেদের। আমি আপনাদের বলতে এসেছি চার দফায় ভোট হয়েছে, বিরানব্বইটির বেশি আসন বিজেপি পাবে। পঞ্চম দফার ভোট হতে দিন, সরকার বিজেপি গড়বে। সভার শুরুতে তিনি বলেন, সভায় মানুষের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ২ তারিখ দিদির বিদায় নিশ্চিত। শাহ বলেন, দিদি বড় নেত্রী, দশ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ওনার বিদায় ধুমধাম সহকারে হওয়া উচিত। বড় মার্জিনে দিদিকে বিদায় দিতে হবে, এজন্য বেশি আসন জিততে হবে। বড়ো নেত্রীর বিদায় ধুমধাম সহকারে হবে। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার গড়বে। মমতাকে উদ্দেশ্য করে অমিত আবার বলেন, দিদি বিজেপি আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে না, কোথাও আপনার ভূল হচ্ছে দিদি, আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে উত্তরবঙ্গের মা, দিদি, বোনেরা। নির্বাচনে লড়ছে এখানকার রাজবংশীরা, গোর্খারা, চা বাগানের শ্রমিকরা। তিনি বলেন, দিদির ভাষণে শুনতে পাবেন বাংলার পরিবর্তে দিদি অমিত শাহের নাম নেয়, অমিত শাহকে বেশি করে গালি দেয়। দিদি আমার জায়গায় বাংলার নাম নিলে হয়তো নির্বাচন জিতত। দিদি সবসময় বলে অমিত শাহের ইস্তফা চাই, তার দলের লোকেরা বলে অমিত শাহের ইস্তফা চাই। মা বোনেরা আপনারা কি চান আমি ইস্তফা দেই?এরপরেই চতুর্থ দফার নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলখুচিতে পাঁচজনের মৃত্যু প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সুর চড়ান অমিত। তিনি বলেন, সবে চতুর্থ দফার নির্বাচন শেষ হয়েছে, নির্বাচনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, দিদি ভাষণ দিয়ে মানুষকে উৎসাহিত করছে সিআরপিএফকে ঘিড়ে ধরতে, অস্ত্র লুঠ করতে বলছে। অস্ত্র লুঠ করার চেষ্টা হওয়াতে গুলি চলে, চারজনের মৃত্যু হয়। দিদি ভাষণ দিয়ে মানুষকে উৎসাহিত না করলে চারজনের মৃত্যু হতোনা। এই চার জনের মৃত্যুর জন্য দিদি দায়ী। এরপর তিনি বলেন, চারজনের মৃত্যু হয়নি, আরো একজন আছেন, আনন্দ বর্মন। ভোট দিতে গিয়ে তৃণমূলের দুস্কৃতিরা তাকে মেরে ফেলে। চারজনের জন্য জোরে জোরে অনেকেই কাঁদছেন, কিন্তু আনন্দ বর্মনের জন্য কেউ দুটো শব্দ খরচ করছে না, কারণ আনন্দ বর্মন রাজবংশী সমাজের। হিন্দু হোক কিংবা মূসলিম, মারা যেই যাক, সবার জন্য চোখের জল আসা উচিত। কিন্তু দিদি মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি করছেন। কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কেন্দ্র প্রদত্ত আঠারো হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকার কৃষকদের দেয়নি এমন অভিযোগ তুলে অমিত শাহ বলেন, কৃষকদের অ্যাকাউন্টে আঠারো হাজার টাকা মোদী সরকার ঢুকিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের সেই টাকা মেলেনি। দুই তারিখে রাজ্যে পরিবর্তন করুন, বিজেপি সরকার আসার পর পাঁচ তারিখে আঠারো হাজার করে টাকা দেবে আপনাদের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে খোঁচা মেরে কর্মসংস্থান নিয়ে সভাস্থলে আগত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভাইপোকে মুখ্যমন্ত্রী করা দরকার, নাকি কর্মসংস্থান দরকার এই বাংলাতে, তা ঠিক করতে দুই তারিখ পদ্মফুলে ভোট দিন, মোদির নেতৃত্বে সোনার বাংলা তৈরি হবে। এরপরই অমিত শাহ বিজেপির ইস্তেহারে উত্তরবঙ্গের জন্য কি কি প্রকল্প রয়েছে তা ভাষণে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকারে এলেই বিজেপি উত্তরবঙ্গে এইমস গড়ে তুলবে, শিলিগুড়িতে মেট্রো রেল, শিলিগুড়ি-কলকাতা সুভাষ চন্দ্র রোড, বাগডোগরাকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করা, নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন তৈরি করা হবে, চা শ্রমিকদের সাড়ে তিনশ টাকা মজুরি প্রদান করা হবে, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা নিয়ে সংগ্রহশালা তৈরি করা হবে। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেনন, রাজ্য সহ সভাপতি দ্বীপেন প্রামাণিক, জলপাইগুড়ির সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত রায়, বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি আলি হোসেন, বিজেপি নেতা মাধব রায়, আগুন রায়, মিঠু সরকার, প্রমথ নাথ সেন সহ অনেকেই।