দীর্ঘদিন ধরে কর্মহীন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের আলমারির ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা, বাইরে থেকে আসা আলমারির গাড়ি আটকে দেখালেন বিক্ষোভ, ব্যবসায়ী সমিতির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক শ্রমিকরা
হরিশ্চন্দ্রপুর, ২৬জুন :-
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে ঢাকঢোল পিটিয়ে গঠিত হয়েছিল ব্যবসায়ী সমিতি। কথা ছিল বিপদে-আপদে দুস্থ ব্যবসায়ীদের পাশে এবং কর্মহীন ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। উল্টে এই ব্যবসায়ী সমিতির কিছু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যস্ত বলে অভিযোগ।বিগত বছরের লকডাউন থেকেই কর্মহীন আলমারির ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা। আলমারির ফ্যাক্টরি চললেও শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না। বাইরে থেকে আনা হচ্ছে আলমারি। প্রশাসনিক এবং ব্যবসায়ী মহলকে জানালেও হয় নি কোনো সুরাহা। এমনকি হরিশ্চন্দ্রপুর মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্তাদেরও জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি।প্রতিবাদে এদিন বাইরে থেকে আসা আলমারির গাড়ি আটকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলেন শ্রমিকরা। ঘটনাস্থলে ছুটে আসে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পুলিশ, পুলিশের আশ্বাসে তুলে নেয় বিক্ষোভ, যদিও শ্রমিকদের দাবি তাদেরকে তাদের কাজ ফিরিয়ে দিতে হবে। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর রেল স্টেশন গামী সড়ক তেতুলবাড়িতে ।
হরিশ্চন্দ্রপুরের আলমারি ফ্যাক্টরিগুলিতে বহু শ্রমিক কাজ করে। সেই কাজের উপর নির্ভর করেই তাদের পরিবার চলে। আগে ফ্যাক্টরি গুলিতে যেমন বাইরে থেকে আলমারি আনা হতো তেমন ভাবে শ্রমিকদের দিয়েও তৈরি করানো হতো। এমনিতেই লকডাউন থেকে কাজ তেমন ভাবে হচ্ছে না। তারপর বর্তমানে শ্রমিকদের আর একদমই কাজ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে কার্যত আলমারির ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। বর্তমানে আলমারির ফ্যাক্টরিতে বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে আলমারি আনা হচ্ছে। এই নিয়ে শ্রমিকরা হরিশ্চন্দ্রপুর ব্যবসায়ী সমিতিকে জানিয়েছে। প্রশাসনিক স্তরে আইসি এবং বিডিওকেও জানিয়েছে। কিন্তু এই সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। তাই এদিন তারা বাইরে থেকে আসা আলমারির গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখায়। তাদের দাবি আগে যেভাবে কাজ চলত সেই ভাবেই কাজ শুরু করতে হবে। না হলে কিভাবে চালাবে তাদের সংসার?প্রশ্ন তুলেছে অসহায় কর্মহীন শ্রমিকেরা। যদিও ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। মালিক পক্ষ থেকে বলা হয়েছে লকডাউনের জন্য সমস্যা হচ্ছিল। চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিকরা কাজ করতে পারছিল না।
আলমারি ফ্যাক্টরি শ্রমিক শিবা ঘোষ বলেন,” হরিশ্চন্দ্রপুরের সমস্ত আলমারি ফ্যাক্টরি শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে গেছে। মালিকরা বাইরে থেকে আলমারি নিয়ে আসছে। এদিকে আমাদের অন্য কোথাও কাজ করতে দিচ্ছে না। ব্যবসায়ী এবং প্রশাসনিক মহলে জানিয়েও সুরাহা হয়নি। তাই আমরা ঠিক করেছি বাইরে থেকে আলমারির গাড়ী ঢুকতে দেবো না যতক্ষণ না আমরা কাজ পায়।”
কৃষ্ণ পাসোয়ান নামে আরেক শ্রমিক বলেন,” লকডাউন থেকে আমরা কর্মহীন। এখন লকডাউন শিথিল হলেও কাজ করাচ্ছে না। বাইরে থেকে আলমারি নিয়ে আসছে। বিভিন্ন মহলে চিঠি দিয়েও কোন সমাধান হয়নি। তাই আমরা গাড়ি আটকেছি। আমাদের দাবি আগের মত কাজ চালু করতে হবে।”
মুজিবুর রহমান নামে এক আলমারির ফ্যাক্টরির মালিক বলেন, “লকডাউনে এমনিতেই কাজ কম হচ্ছে। শ্রমিকরা অর্ডারের চাহিদামত জিনিস তৈরি করতে পারে না। তাই আমাকে বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। আমার এখানে ১৫ দিন ধরে কাজ বন্ধ আছে। এখন আলমারি তৈরির সিট পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে। দরকার হলে আমি শ্রমিকদের সাথে মীমাংসায় বসতে রাজি আছি।”
হরিশ্চন্দ্রপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক পবন কেডীয়া বলেন,” দুই থেকে তিন দিন আগে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা পদক্ষেপ নিব না এমন কোনো ব্যাপার নেই। সবেমাত্র ঘটনাটি জানতে পেরেছি।”
এদিকে এই ঘটনায় ব্যবসায়ী মহলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতদিন ধরে এতো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে আছে। তাদের জানানো সত্ত্বেও তারা কেন পদক্ষেপ নেয়নি তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।