দুর্নীতি মামলায় অবশেষে আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান

নিউজ ডেস্ক,হরিশ্চন্দ্রপুর.২২মার্চ: ২০১৭ সালের বন্যার ত্রাণ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত তিনজন অবশেষে আত্মসমর্পণ করলো। এর আগে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল দুজন। আর মঙ্গলবার আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে পঞ্চায়েত প্রধান। এই ঘটনায় শাসক দলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে আবার নতুন মোড়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবার চাঁচল মহকুমা আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সোনা মনি সাহা। ২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মোট তিন জন কে সুপ্রিম কোর্ট আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেয় দুই সপ্তাহের মধ্যে। আজ ছিল তার শেষ দিন। ইতিমধ্যেই বাকি দুই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আফসার হোসেন এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাদক্ষ রোশনারা খাতুন হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদেরকে ১০ দিনের পুলিশি হেপাজত চেয়ে চাঁচল মহকুমা কোর্টে তোলা হয়েছে।

২০১৭ সালের বন্যার ত্রাণ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ৩ মাথা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। প্রধানের নামে হূলিয়া জারি থেকে শুরু করে সম্পত্তি ক্রোক করেছিল হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। অভিযুক্ত ৩ জন আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করলে সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আদালত থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় দুই সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর এই নির্দেশের মধ্যেই পরপর তিন জন আদালতে আত্মসমর্পণ করার ঘটনা নতুন দিকে মোড় নিল বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকে ২০১৭ সালের বন্যার ক্ষতি-গ্রস্তদের জন্য দুই দফায় ১৩ কোটি টাকা স্যাংশন হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ এই টাকা প্রকৃত বেনেফিশিয়ারি না পেয়ে বেশ কিছু তৃণমূল নেতা এবং জন-প্রতিনিধিদের পকেটে গিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মতো দুর্নীতির অভিযোগ হয়েছে। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে।

বরুই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সোনা মনি সাহা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আজ আমি কোর্টে এসে আত্মসমর্পণ করলাম। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি সিবিআই তদন্তের দাবি করছি। তাহলে কারা এর পিছনে জড়িত প্রমাণ হয়ে যাবে।

তৃণমূল নেতা তথা হরিশ্চন্দ্রপুর চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা বলেন, কিছু ক্ষণ আগেই শুনলাম সোনা মনি সাহা আত্মসমর্পণ করেছেন। আমাদের নেত্রীর নির্দেশ আছে দল কোন ভাবে দুর্নীতি গ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে না। আইন আইনের পথে চলবে।

বিজেপি নেতা তথা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ আগরওয়ালা কটাক্ষ করে বলেন, এটা ট্রেলার ছিল আসল পিকচার বাকি আছে। তৃণমূল এতদিন মানুষের সাথে খেলেছে। এবার মানুষ আর বিরোধীরা তৃণমূলের সাথে খেলবে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত নামলেই তৃণমূলের বড় বড় নেতাদের নাম উঠে আসবে। একদিন এদের সবাইকেই আত্মসমর্পণ করতে হবে।

মূল অভিযোগকারী তথা বড়ই গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, এর আগেই দুজন আত্মসমর্পণ করেছিল। কিছুক্ষণ আগে প্রধান সোনামনি সাহা আত্মসমর্পণ করেছে বলে শুনলাম।এরা বন্যা দুর্গত মানুষদের ত্রাণের জন্য আসা কোটি কোটি টাকা আত্মসমর্পন করেছে। আইনের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। এদের সঠিক বিচার হবে। আমাদের দাবি যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ তারা যাতে তাদের টাকা ফেরত পায়।

উল্লেখ্য ২০১৭ সালে মালদহ জেলার এই এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বহু মানুষ। সেই সময় সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো ত্রানের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই মামলায় অভিযুক্ত ৩ জন অবশেষে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল। তাদের বিরুদ্ধে, যে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ তা সত্য প্রমাণিত হলে প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *