ধান জমি বসে গিয়ে তৈরি হয়েছে দেড় কিমি নদীখাত, চাঞ্চল্য ধূপগুড়ির কালিরহাটে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা
ধূপগুড়ি, ২২ সেপ্টেম্বর: কেউ বলছেন ইউট্রোফিকেশনের ফলে মাটি বসে গিয়ে নতুন নদী খাত তৈরি হয়েছে; আবার কেউ বলছেন টেকটনিক ইভেন্ট থেকেই তৈরি হয়েছে নদী খাত। তবে সঠিক কি কারণে ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি ১ অঞ্চলের কালিরহাট এলাকায় ধান জমিতে মাটি বসে গিয়ে নতুন করে নদী প্রবাহ তৈরি হয়েছে এ নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। কৃষি জমি বসে গিয়ে নতুন একটি নদী প্রবাহ তৈরি হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সেই নতুন নদী খাতের গভীরতা এখনও পরিমাপ করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর এমনিতেই প্রবল বর্ষণ হয়েছে, কিন্তু ঐ এলাকায় থাকা কৃষিজমিতে সামান্য বৃষ্টিতে জমি বসে গিয়ে গভীর নদী খাতে পরিণত হয়েছে। যার দরুন প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি এলাকার ধান জমি তলিয়ে গিয়েছে নব্য সৃষ্ট ঐ নদীর তলদেশে।
এদিন ঐ এলাকা পরিদর্শনে আসেন ধূপগুড়ির বিধায়ক মিতালী রায়, ধূপগুড়ির কৃষি অধিকর্তা তিলক বর্মন, তৃণমূল কংগ্রেসের গ্রামীণ ব্লক সভাপতি ধজেন রায়। পরিস্থিতি দেখে তাদেরও চক্ষু চড়কগাছ। তবে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার। সৃষ্টির এই আশ্চর্য রুপ দেখে ধূপগুড়ির বিধায়ক মিতালী রায় বলেন, “করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দূষণ কমেছে, প্রকৃতি এখন নিজের ছন্দে ভাঙা গড়ার খেলায় মেতেছে। দূষণ কমেছে তাই প্রকৃতি নতুন কিছু তৈরি করছে”। উত্তরবঙ্গের মানুষ প্রকৃতির পূজারী। প্রকৃতির এই নতুন সৃষ্টিকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। সেই কারণে ঐ এলাকায় প্রকৃতির এই নতুন সৃষ্টিকে দেখার জন্য কাতারে কাতারে মানুষ জমা হচ্ছেন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় ঐ এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল সান্তাই নামে একটি নালা। সেই নালার স্রোত মিলিত হয় বামনী নদীর সাথে। সেই সান্তাই অনেক দিন আগেই বুজে গিয়েছিল। কিন্তু তিন চার বছর আগে সান্তাইয়ের মোহনায় হঠাৎ করেই দুই দিকের কৃষিজমি বসে গিয়ে তৈরি হয় অগভীর গর্তের। স্থানীয়রা মনে করেন, বামনী নদী এগিয়ে এসেছে জমির দিকে বা কেউ বলছেন বামনী নদীর আগমন। এ বছর বর্ষায় প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি কৃষিজমি বসে গিয়ে তৈরি হয়েছে ঐ নদী খাতের।
হঠাৎ করে ঐ এলাকায় নদী তৈরির কারণ কি? এ বিষয়ে জানা গেছে যে, নদী তার নিম্ন প্রবাহে ক্ষয় কাজের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করে। এক সময় ঐ এলাকায় নালা থাকলেও সময়ের বিবর্তনে সেখানে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। তাই নদী তার মিলনস্থল থেকে ক্ষয় কাজের মাধ্যমে পুনর্জীবন লাভ করার চেষ্টা করেছে। ভূগোলের ভাষায় একে নদীর পুনর্জীবন লাভ বলা হয়। তবে অনেকে নদীর মস্তকমুখী ক্ষয় কাজের ফলে তার নিক পয়েন্ট বদলের প্রভাবে নতুন নদী খাত তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন। এ বিষয়ে মালদা কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক মিঠুন রায় বলেন, প্রাকৃতিক বা মনুষ্যজনিত কারণেও মাটি বসে গিয়ে নদী খাত তৈরি হতে পারে। ভূমিকম্পের কারণেও হতে পারে বলে তার মত। তিনি বলেন, ঐ এলাকা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে অবস্থিত, তাই টেকটনিক ইভেন্ট এর ফলে নতুন নদী সৃষ্টি হয়েছে কিনা তা গবেষণা করে দেখতে হবে। ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক মধুসূদন কর্মকার বলেন, পূর্বে সেখানে ছোট জলাশয় ও শ্যাওলা জমে থাকায় সেগুলি চাপা পড়ে ইউট্রোফিকেশনের মাধ্যমে হিউমাসে পরিণত হয়। এতদিন ওই কৃষিজমিগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলেও এবছর ভারী বৃষ্টির দরুন ওই অঞ্চলের মৃত্তিকা বসে গিয়েছে।
তথ্য : সুব্রত রায় ও অমিতাভ রায়। লিখন: ক্ষীরোদা রায়।