নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সমর্থকদের প্ররোচনায় পা না দেওয়ার আবেদন মমতার
সুব্রত রায় ও ক্ষীরোদা রায়, ধূপগুড়ি: ভাঙ্গা পায়েই খেলতে এসেছি তাই বিপুল ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিতালী রায়কে জয়ী করুন। ধূপগুড়িতে নির্বাচনী প্রচারে এসে এমনটাই বললেন মমতা। ধূপগুড়ি ও কালিম্পংয়ে সিএএ ও এনআরসি নিয়ে অমিত শাহের বক্তব্যের জবাব ধূপগুড়িতে এসে দিলেন মমতা। বললেন, আমরা এনআরসি ও সিএএ চাইনা। এদেশের নাগরিক আমরা সবাই। অপরদিকে, ধূপগুড়ির ফণিরমাঠে অমিত শাহের জনসভায় গত মাসের ২৯ তারিখে কাশ্মীরে শহীদ জওয়ান জগন্নাথ রায়ের মা ও স্ত্রীকে বিজেপি সভা মঞ্চে আনতে না পারলেও তাদেরকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চে নিয়ে আসা হয়। মঞ্চে বি.আর.আম্বেদকর ও শহীদ জওয়ান জগন্নাথ রায়কে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এবং এইদিন অন্য একটি ঘটনা হলো তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে জেলার কোন সংখ্যালঘু নেতাকে মঞ্চে দেখতে পাওয়া যায়নি। তবে এই বিষয়টি ধূপগুড়িতে ততটা প্রভাব না ফেললেও জগন্নাথ রায়ের মা ও স্ত্রীকে সভা মঞ্চে নিয়ে আসতে পারায় কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে বিজেপি।
এদিন ধূপগুড়িতে বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মিতালী রায়ের সমর্থনে জনসভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তার আগে মাথাভাঙ্গাতে যান। সেখানে গিয়ে শীতলখুচিতে চতুর্থ দফার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহত চারজনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তারপরেই ধূপগুড়িতে আসেন এবং সেখান থেকে জলপাইগুড়ি ও ডাবগ্রামে যান নির্বাচনী প্রচারে।
কালিম্পংয়ের জনসভায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি তথা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভাষণে বলেন, “গোর্খা ভাইদের জন্য আমরা এনআরসি করছিনা, আমরা কখনো এনআরসি করার কথা বলিনি।” ধূপগুড়ির জনসভায় শাহ সিএএ চালু করে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেবার কথা ঘোষণা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি ও সিএএ নিয়ে অমিত শাহের ভাষণের কট্টর সমালোচনা করে বলেন, “আমার যত রাজবংশী ভাইবোন আছেন, আমার যত উদ্বাস্তু ভাইবোন আছেন, কোন এনপিআর করতে দেব না, এনআরসি করতে দেব না কোন সিএএ করতে দেব না, আপনারা সকলেই এদেশের নাগরিক। উদ্বাস্তুদের জমির দলিল নিঃস্বার্থ ভাবে দেওয়া হবে।” মোদি ও শাহকে উদ্দেশ্য করে মমতার কটাক্ষ নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ মিথ্যেবাদী। গুলি করে মারার চৌকিদার।জলপাইগুড়িতে দাঁড়িয়ে এক কথা বলে, পাহাড়ে গিয়ে আর এক কথা বলে। নির্বাচন কমিশন চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারের জন্য যে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তার প্রভাব পড়েছে মমতার ভাষণে। এইদিন বিজেপির প্রতি আক্রমণ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার কথা বলেননি মমতা। তিনি বলেন, ভোটার লিস্টে নাম রাখবেন ভোট দিতে এসে শান্তি বজায় রাখবেন, সবাই নিজের ভোট দেবেন, কারো নাম যেন বাদ না যায়, কেউ ভয় দেখালে শুনবেন না, কেউ গন্ডগোলে যাবেন না,কেউ প্ররোচনায় যাবেন না, শান্তিতে ভোট দেবেন। ইভিএম খারাপ হয়ে গেলে দরকার হলে একদিন পান্তা ভাত খেয়ে অপেক্ষা করুন। রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, ঘরে ঘরে বিনে পয়সায় রেশন দেব, বিনে পয়সার রেশনের চাল রান্না করবেন হাজার টাকার গ্যাস দিয়ে। সাহস থাকলে বিনে পয়সায় গ্যাস দিক।
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, কত ছেলের চাকরি করে দিয়েছি, কয়েক হাজার চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে। দুশো রাজবংশী স্কুল সহ কুরুখ, অলচিকি ভাষায় পার্শ্ব শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এইদিন ধূপগুড়িতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন মমতা। বিনে পয়সায় খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিসেবা,চা বাগানে বাড়ি, ধূপগুড়িকে মহকুমা ঘোষণা সহ বলেন , তপশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্তরা মাসে হাজার টাকা হাত খরচ পাবে, সাধারণ শ্রেণীর মানুষ পাঁচশো থেকে হাজার টাকা পাবে। কৃষকদের পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য দশ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে।
জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়িতে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ডাঃ প্রদীপ কুমার বর্মা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে করোনা স্বাস্থ্য বিধিকে শিকেয় তুলে রাজনৈতক দলগুলি সভা সমিতি মিটিং মিছিল চালিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্ট একটি জনস্বার্থ মামলার সূত্রে নির্দেশ জারি করে জনসভাগুলোতে ভিড় ও জমায়েত করা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচনের সভা ও মিটিং মিছিল বাতিল করতে হবে। করোনা বাড়লে তার জন্য দায়ী থাকবে নির্বাচন কমিশন। জেলাশাসক চাইলে যেকোন প্রার্থীর প্রচার বন্ধ করতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। তারপরেও করোনা বিধিকে উল্লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে চলছে রাজনৈতিক দলগুলির ভোট প্রচার।
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৮৩ হাজারেরও বেশি। মৃত্যুর সংখ্যা একদিনেই হাজারের বেশি। জলপাইগুড়ি জেলায় আক্রান্ত ৭৪ জন। তারমধ্যে একজন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, আমাদের একজন প্রার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যার জন্য আমরা ঘোষণা করেছি প্রত্যেকটা মিটিং এবং সভাতে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে। এরপরও একটা অংশের মানুষ এগুলো মানছেন না। স্বাভাবিকভাবেই করোনা যেভাবে বাড়ছে সেটা উদ্বেগের।