পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে স্বপ্না বর্মন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল পোস্ট
ক্ষীরোদা রায়, জলপাইগুড়ি: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষা পর্ষদ অনুমোদিত পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকে জায়গা পেল অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত অ্যাথলেটিক সোনার মেয়ে স্বপ্না বর্মনকে নিয়ে রচিত একটি অধ্যায়। পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি সহায়ক পুস্তক উইংস-এ স্বপ্না বর্মনকে নিয়ে ছাপানো হয়েছে একটি রিডিং স্কিল। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের এই উদ্যোগে স্বপ্না শুধু খুশিই নয়, রীতিমতো গর্বিত হয়েছে সে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এই পোস্ট। স্বপ্না নিজেও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন এটি। উল্লেখ্য, বিদ্যালয়গুলিতে নতুন বই বিলি করা হয় জানুয়ারি মাসে।
জলপাইগুড়ি সদর ঘোষপাড়ার পাতকাটা কলোনির স্বপ্নার মা বাসনা বর্মন ছিলেন চা বাগান শ্রমিক ও বাবা পঞ্চানন বর্মন রিকশা চালক। প্রত্যন্ত গ্রামে বাড়ি স্বপ্নার। দারিদ্র্যতার ছাপ ছিল চোখেমুখে। সেই জায়গা থেকে লড়াই করে স্বপ্না এখন ভারতের শিশু ও যুব সমাজের আইডল। পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে তাঁর লড়াইয়ের কাহিনী স্থান পাওয়ায় শিশু মনে অ্যাথলেটিক সম্পর্কে প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন উত্তরবঙ্গের ক্রিড়া শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের মতে, শৈশব স্তরের শিক্ষার্থীরা যেমন স্বপ্না বর্মনকে চিনতে পারবে, তাঁর পোড়খাওয়া লড়াইয়ের কাহিনী জানতে পারবে তেমনি অ্যাথলেটিক সম্পর্কে পড়ুয়াদের মনে ধারণা তৈরি হবে। এভাবেই একদিন আরো অনেক স্বপ্না তৈরি হবে বলে মনে করেন তাঁরা। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জলপাইগুড়ির রাজবংশী পরিবারের স্বপ্না বলেন, পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্য পুস্তকে প্রকাশিত আমার কাহিনী নিয়ে যে অধ্যায় তা অধ্যয়ন করে ভবিষ্যতে আমার চেয়ে আরও ভালো স্বপ্না উঠে আসুক এটাই চাইবো।
২০১২ সালে কলকাতায় সাইয়ে যোগ দেন। ২০১৭র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা ও ঐ বছরে ফেডারেশন কাপে সোনা জয়লাভ করেন।২০১৮ সালে এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলনে সোনা জিতেছেন স্বপ্না। সোনা জয়ের আনন্দে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার স্বপ্নাকে দশ লাখ টাকা উপহার দেয়। ২০১৯ সালে পান অর্জুন পুরস্কার। ঐ বছর দোহায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হেপ্টাথলনে রৌপ্য পদক পান।
সোনার কন্যা স্বপ্না এদিন জানালেন, আমি ভাবতেই পারিনি যে পাঠ্যসূচীতে আমাকে স্থান দেওয়া হয়েছে, জীবনের কঠিন সময় পেরিয়ে রাজ্য সরকার যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ স্বপ্না বলেন, “ফেসবুকে দেখেছি বইয়ের পাতায় আমার ছবি সহ একটা অধ্যায় ছাপানো হয়েছে, পরে দিদির মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়ে সেও ফোন করে বলে আমাকে নিয়ে পাঠ্য বইয়ে লেখা রয়েছে।” সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বপ্নার সঙ্গে এর আগে আলোচনা করা হয় অষ্টম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে তাঁর সাফল্যের কাহিনী পড়ুয়াদের পড়ানো হবে, তবে পঞ্চম শ্রেণি থেকে চালু হওয়ায় স্বপ্না খুশি। তাঁর কথায়, স্পোর্টসম্যান তৈরি করার উপযুক্ত বয়স হল শৈশবকাল, আর শিশুদের পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে ঐ অধ্যায়, সেটি পড়ার পর অনুপ্রানিত হয়ে আশা করি আমার চেয়েও আরও ভালো প্রতিভা উঠে আসবে।