ফেসবুকে রাজবংশী সমাজের হলদিয়া ঝড়ের জৌলুস কমেছে

ক্ষীরোদা রায়: ফেসবুক জুড়ে হলুদ গামছার ঝড়, রাজবংশীরা বলছেন হলদিয়া ঝড়। গত বছর ৮ই আগস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজবংশী যুব মঞ্চের সদস্যরা ৮ই আগস্ট হলদিয়া গামছা পরে ছবি পোস্ট করার মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ রাজবংশী জাতির একতাবোধ প্রচারের উদ্যোগ নেয়। তবে গত বছরে যে উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে এবছর তা অনেকটাই ফ্যাকাসে হয়েছে বলে মনে করেন রাজবংশী সমাজের একাংশ। তাঁদের দাবি মতাদর্শগতভাবে রাজবংশী সমাজ বিভাজিত, তাই একটি জাতীয় জনসমাজ হিসেবে উত্তরণ হতে পারেনি রাজবংশী সমাজ। হলদিয়া গামছা দিয়ে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবছর তার জৌলুস অনেকটাই কমেছে।

গবেষকদের মতে, সর্ষে ফুলের মত হলুদ রঙের গামছা ব্যবহার নিয়েও রাজবংশী সমাজে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে বৃহত্তর রাজবংশী সমাজ হলুদ গামছাকে আপন করে নিয়েছে।জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যায়ের সমস্ত রকম শুভ কাজে হলুদ রঙের ব্যবহার করে থাকেন এই সমাজের মানুষ।

রাজবংশী এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশনের সভাপতি রতন বর্মা বলেন, কামতাপুর তথা কোচবিহার রাজ্যের মহারাজা নরনারায়ণের ভাই তথা রাজ্যের প্রধান সেনাপতি বিশ্ব মহাবীর চিলা রায় যুদ্ধযাত্রার উদ্দেশ্যে একজোড়া সাদা পায়রার গায়ে কাঁচা হলুদ লাগিয়ে সেই পায়রা দুটি আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়। সাদা পায়রা যে রাজ্যের দিকে উড়ে যায় সেই সব রাজ্যকে জয়লাভ করেন কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ন।

কোচবিহার রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য কুমার সুপ্রিয় নারায়ণ বলেন, আমার ব্যাক্তিগত মতামত, এই “একতা দিবস” যদি বীর চিলা রায়ের ‘জন্ম দিনে’ পালন করা যায়, তাহলে যথার্থ হয়, কারণ আমাদের জাতির মানুষেরা সেই সময়, বর্তমানের উত্তরবঙ্গ, বাংলাদেশের উত্তরভাগ, অসম, নেপালের ঝাপা, মোরং, বিহারের পূর্ণিয়া‌ এই সমস্ত জায়গাতে ছোটো ছোটো রাজ্য বা মণ্ডলের অধিকারী ছিল, সেই কারণে বহিরাগত শক্তি অনায়াসেই আমাদের রাজ্যে আক্রমন করে ও লুঠপাট চালায়। বীর চিলা রায় এই সমস্ত জায়গাকে একত্র করে এক বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করেন। সেই কারণে আমি মনে করি বীর চিলা রায় দিবসে আমরা এই দিবসটা পালন করলে বীর চিলা রায়ের আদর্শকে যথার্থ সম্মান দেওয়া হবে।


রাজবংশী যুব মঞ্চের অন্যতম পদাধিকারী শিলাজিৎ রায় বলেন, চিলা রায় যেভাবে একটি বৃহত্তর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী জাতি গঠণ করেছেন, বিদেশী শক্তি কিন্তু সেই কারণে কামতাপুর তথা কোচবিহার দখল করতে পারেনি। তবে আজকের দিনে হলদিয়া গামছা দিয়ে যে ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে। মতাদর্শগতভাবে রাজবংশী সমাজ বিভিন্ন স্রোতের সঙ্গে মিশে আছে। জাতীয় জনসমাজ গঠণে মতাদর্শগত ভাবে ঐক্যবদ্ধ না হতে পারার কারণে এই সমাজের বহু দাবি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পূরণ হচ্ছে না। তবে রাজ্য সরকার বেশ কিছু দাবি পূরণ করেছে, একে অস্বীকার করা যাবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *