ব্রিটিশ সাহেবকে লোক দেবতা রূপে পূজা করেন রামশাই এলাকার মানুষ

বাপ্পা রায়, ময়নাগুড়ি, ২৯ নভেম্বর : আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ব্রিটিশ সাহেবদের আনাগোনা ছিল বিভিন্ন এলাকায়। তারা নানা সময় বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকেছেন। অনেক জায়গায় সেই সাহেবদের নামানুসারে জায়গার নামকরণ করা হয়েছে। এমনই এক স্থান রয়েছে ময়নাগুড়ি ব্লকের রামশাই গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাড় বড়গিলা এলাকায়। জায়গার নাম করণ হয়েছে সাহেব কুড়া। সেই এলাকায় প্রায় ৩১ বছর ধরে সাহেব কুড়া নামে লোক দেবতারও পূজা করে আসেন স্থানীয়রা। কিন্তূ কেন এই নামকরণ, কেনই বা ব্রিটিশ সাহেবের নামে এই পূজা পার্বণ?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজবংশী কামতাপুরি ভাষায় কুড়া শব্দের অর্থ জলাশয় ধরনের। রামশাই এলাকার এক নদী ইচিলামারি। সেই নদীর মাঝে বড় কুড়া বা বড় মাপের এক জলাশয় ছিল। তার পূর্ব প্রান্তে পান বাড়ি কলোনি এলাকায় বসবাস করতেন ব্রিটিশ সাহেব। ব্রিটিশ সাহেব তার কাজে ব্যবহৃত ঘোড়া, হাতিদের স্নান করানো থেকে শুরু করে জল খাওয়ানোর কাজ করতেই সেই কুড়ায়। সেই থেকেই ওই জলাশয়ের নাম হয় সাহেব কুড়া। এরপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ব্রিটিশরা চলে যান। কিন্তূ ব্রিটিশ সাহেব চলে গেলেও বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক ঘটনা দেখতে পেতেন স্থানীয়রা। অলৌকিক ঘটনার জেরে আতঙ্কিত ও ভীত হয়ে এই ব্রিটিশ সাহেবকে লোক দেবতা রূপে স্থান দেন । এরপর ১৯৯১ সালে রামশাই গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাড় বড়গিলা এলাকায় স্থানীয় মানুষরা সাহেবকুড়া নামে লোক দেবতার স্থান দিয়ে পূজা শুরু করেন। এই দেবতাকে দেখা যায় এক ঘোড়ার পিঠে বসে থাকা এক ব্রিটিশ সাহেব। এই বিষয়ে রামশাই এলাকার প্রবীণ নাগরিক তথা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রত্নেশ্বর রায় বলেন," আমি তখন ছোট ছিলাম। ইচিলামারি নদীতে বড় কুড়া ছিল। সেখানে ব্রিটিশ সাহেবরা হাতিদের জল খাওয়াতো। ব্রিটিশ সাহেব সেখানেই বসবাস করতেন। সেই থেকেই এই এলাকার নাম সাহেব কুড়া।"

১৯৯১ সালে পূজা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই নিষ্ঠার সাথে আজও পূজা হয়ে আসছে ওই এলাকায়। এবছরও গত শনিবার সাহেব কুড়া দেবতা ও মহাকাল দেবতার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজাকে কেন্দ্র করে মেলা ও দুই দিন ব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন পূজা কমিটি। এই বিষয়ে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তথা পূজা কমিটির প্রাক্তন সভাপতি ধীরেন রায় বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন থেকেই এই দেবতার পূজা করে আসছি। আমরা জানি যে এখানে ব্রিটিশ সাহেবরা থাকতেন। সেই থেকে এই এলাকার নাম সাহেব কুড়া হয়। তারা চলে গেলেও অনেক ধরনের অলৌকিক ঘটনা আমরা দেখেছি ফলে দেবতা জ্ঞানে সেই ব্রিটিশ সাহেবকে পূজা দিয়ে আসছি। এবছরও আমরা সেই পূজা করেছি এবং দুই দিন ব্যাপী মেলা ও গানের আসর বসেছে আমাদের এই মাঠে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *