ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে রহস্যমৃত্যু, পরিযায়ী শ্রমিক দিপুর দেহে ক্ষতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ পরিবারের

রাজগঞ্জ: ভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিয়ে রুজি-রুটির সন্ধানে যাওয়া এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু ঘিরে ছড়াল ধোঁয়াশা ও আতঙ্ক। পুনেতে কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, শরীরে ধারালো অস্ত্রের চিহ্ন দেখে পরিবারের সন্দেহ— ঘটনাটি স্রেফ দুর্ঘটনা নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত খুন।

মৃত ব্যক্তির নাম দিপু দাস (বয়স আনুমানিক ৩৫)। রাজগঞ্জ ব্লকের বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমবাড়ি ফালাকাটা গোকুলভিটা গ্রামের বাসিন্দা দিপু দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। প্রায় দু’মাস আগে পুনেতে একটি নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিকের কাজে যোগ দেন।

ঘটনার জটিলতা শুরু হয় সোমবার। ওইদিন দিপুর মায়ের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছায় ঠিকাদারের কাছে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আসে দুঃসংবাদ— দিপু নিজেও মারা গেছেন, দাবি করা হয় ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। কিন্তু এরপর যা ঘটে তা আরও বিভ্রান্তিকর।

মঙ্গলবার রাতে পরিবারের কাছে আসে দিপুর মৃত্যুর ছবি। আর সেই ছবিতেই দিপুর গলায় স্পষ্ট ধারালো অস্ত্রের দাগ নজরে আসে। সঙ্গে সঙ্গে সন্দেহ দানা বাঁধে পরিবারে। দিপুর ভাইয়েরা জানিয়েছেন,

“ছবি দেখে মনে হচ্ছে ওর মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। আমরা চাই সঠিক তদন্ত হোক। এই অবস্থায় মায়ের মৃত্যুর পরে দাদার দেহ নিয়ে আসা সম্ভব নয়। সরকার যদি সাহায্য করে, আমাদের জন্য উপকার হবে।”

আরও বিপাকে পড়েছে দিপুর পরিবার। একই দিনে মা ও দাদার মৃত্যু, সঙ্গে আর্থিক সঙ্কট— সব মিলে দিশেহারা তারা। দেহ আনার খরচ বহন করাও সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পরিবার।

এলাকাবাসী বাবলু রায় বলেন,

“ছবিতে দেখে মনে হচ্ছে ওকে কেউ মেরে ফেলেছে। এই অবস্থায় দেহ আনতে পরিবারের সদস্যদের কেউই যেতে পারছে না।”

এই প্রসঙ্গে বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সমিজুউদ্দিন আহমেদ জানান,

“যেভাবে আজকাল ভিন্ন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর অত্যাচার বাড়ছে, তাতে এই মৃত্যু সন্দেহজনক বলেই মনে হচ্ছে। পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হবে।”

দিপুর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই এলাকায় তীব্র ক্ষোভ এবং শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের দাবি, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং দেহটি দ্রুত ও নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার।

এখন দেখার, প্রশাসন ও সরকারের তরফে কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয় এই দুঃখজনক ও রহস্যজনক ঘটনায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *