সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে চুন তৈরি করেও লাভের মুখ দেখতে পাননা তামলি সম্প্রদায়ের সদস্যরা

জয়দীপ মৈত্র, দক্ষিণ দিনাজপুর :-

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহরের ১নং ওয়ার্ডের কাদিঘাট এলাকায় দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে ঝিনুক থেকে চুন প্রস্তুত করছেন তামলি সম্প্রদায়ের ৫ পরিবারের সদস্যরা । এই সদস্যদের চুন তৈরি করে রুজিরোজগার হয় । এই বিষয়ে সঞ্জয় তামলি নামে এক চুন প্রস্তুতকারী জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চুনের উপর ঋণ থাকা সত্ত্বেও আজ অব্দি আমরা কোন রকম সরকারি সহযোগিতা পাইনি । এলাকার নেতা-মন্ত্রীরা বা সরকারি কোন মানুষ তাদেরকে গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি । এই তামলি সম্প্রদায়ের ৫ পরিবারের সদস্যরা ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করলেও গ্রাম থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় তাতেই তাদের প্রায় সব চলে যায় । কোন রকমে টেনেটুনে সংসার চালাতে হয় তাদের । গ্রাম থেকে ২০০ টাকা করে ঝিনুক কিনে বাড়িতে নিয়ে এসে চুন প্রস্তুত করে ৩ টাকা প্যাকেট হিসেবে বিক্রি করা হয় ।

এই বিষয়ে চুন প্রস্তুতকারী বিজয় তামলি ও বিমল তামলি জানান, প্রাকৃতিক ভাবে এই চুন প্রস্তুত করা এবং নানান গ্রাম থেকে নদীর ঝিনুক কিনে নিয়ে সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো গাড়ি করে নিয়ে এসে সেখান থেকে চুন তৈরি করেন । এই চুন তৈরি করার কাজটিও বেশ খাটুনির । ২৪ ঘন্টা ধরে বড় বড় উনুনে পোড়ানো হয় । এরপর চুন তৈরি করার শেষে তাকে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে আবার তাকে জল দিয়ে রেখে তিন ঘন্টা ঘোলাতে হয়। তারপর কাপড়ে ছেঁকে রাখার পর সেটি যখন আস্তে আস্তে জমতে শুরু করে তখন বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং সেটিকে প্যাকেট করে গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে বিক্রি করেন । এই চুন শুধুমাত্র পানে খাওয়ার জন্য বিক্রি হয় । কিন্তু বর্তমানে পাথরের চুন বাজারে ঢুকে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা মার খেয়েছে, পাশাপাশি লাভের মুখ তারা খুব কমই দেখেছে বলে তারা জানান । সরকারি সহযোগিতা না থাকার ফলে তাদের লক্ষ্মীর ভাঁড়ে টান পড়েছে ,তাই তাদের কথা চিন্তা করে যদি সরকার একটিবার তাদের সাহায্য করেন তাহলে তারা খুব উপকৃত হবে বলে জানান । তাই বাপ-ঠাকুরদার চলে আসা তামলি সম্প্রদায়ের প্রাকৃতিক নিয়মে চুনপ্রস্তুত ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সাহায্যের করুন আর্জি জানান ৫ টি পরিবারের সদস্যরা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *