স্মার্টফোনের যুগে হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের কালীপুজোর পাহাড়

অপু দেবনাথ , হলদিবাড়ি:বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে । তার আশীর্বাদে মানুষ দিন দিন হয়ে উঠেছে আধুনিক । কিন্তু সেই সঙ্গেই হারিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু জিনিস । কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি এলাকায় । একদশক আগেও হলদিবাড়ির কালীপুজোর আকর্ষণ মানেই ছিল আলোর উৎসবের পাশাপাশি শিশুদের তৈরি মাটির পাহাড় । প্রায় প্রতি বাড়িতেই শিশুরা এই পাহাড় তৈরি করতো । কোদাল দিয়ে মাটি কেটে এনে পাহাড় তৈরির প্রস্তুতি চলতো সপ্তাহ খানেক আগে থেকে । এরপর মাটির চাঁপা কেটে পাহাড়ে জঙ্গল তৈরি করা হতো । মাটি দিয়ে তৈরি পাহাড়কে সুন্দর করতে তার মাঝেই তৈরি করা হতো রাস্তা । তারপর নানান খেলনা আলো দিয়ে সাজানো হতো । সময় বদলেছে এখন বিজ্ঞানের আশীর্বাদে প্রায় প্রত্যেক মানুষের হাতে পৌঁছে গিয়েছে স্মার্টফোন । আর স্মার্টফোনেই দিন কাটে বেশির ভাগ শিশুদের তাই এখন আর শিশুদের মাটির পাহাড় তৈরিতে কোনও আগ্রহ চোখে পড়ে না। এমনটাই মনে করছেন হলদিবাড়ির অভিভাবকদের একাংশ । আবার কেউ কেউ মনে করেন যে বড়রা শিশুদের পাহাড় তৈরির ক্ষেত্রে অনুপ্রাণিত করছে না বলেই শিশুদের মাঝে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে তা।

হলদিবাড়ির অরবিন্দ কলোনির এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব রায় জানান , ধীরে ধীরে এই পাহাড় বানানো উঠে যাচ্ছে । বাচ্চারাও পাহাড় তৈরিকে ঝামেলা মনে করে , অন্যদিকে অভিভাবকরাও বাচ্চাদের এই বিষয়ে উৎসাহিত করে না । মানুষ আধুনিক হচ্ছে অন্য দিকে মানুষের ছোট ছোট আবেগের জায়গাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে যার ফলে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতির ।

হলদিবাড়ি ব্লকের দেবত্তর বক্সিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এক অভিভাবক হিতেন দেব অধিকারী জানান , ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম আমাদের কাছে বিনোদনের খুব কম পথ ছিল। এখনকার বাচ্চারা স্মার্টফোনে মেতে রয়েছে । কালীপুজোর পাশাপাশি এটাও আমাদের কাছে একটা উৎসব ছিল । পরবর্তী প্রজন্ম এটাকে গ্রহণ না করায় পাহাড় তৈরির প্রবণতা হারিয়ে যাচ্ছে ।
হলদিবাড়ি ব্লকের দেবত্তর বক্সিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শুভজিৎ বর্মন পেশায় উকিল তিনি জানান , এই স্মার্টফোনের যুগে, বর্তমান প্রজন্মের ক্ষুদে বাচ্চারা কালীপুজোয় পাহাড় বানানোর আনন্দটা তারা উপভোগ করতে পারছেনা‌। আমাদের সময় আমরা পূজোর কয়েকদিন আগে থেকেই এই উদ্যোগটা নিয়ে রাখতাম যে পাহাড় কীভাবে বানাবো‌ আর কি কি সামগ্ৰী লাগবে..! তাছাড়া অভিভাবকেরাও খুব উৎসাহ দিতেন যে পাহাড় বানাও কিন্তু বর্তমানে অভিভাবকেরাও তাদের এই ব্যাপারে জানান না বা উৎসাহ দিচ্ছেন না‌। বরং তাদের স্মার্টফোন হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন‌। এভাবেই আমাদের অতীতের সংস্কৃতিগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে‌।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *