১৩ই জানুয়ারী সিনেমা হলে আসছে রাজবংশী ছবি বিহান – টিউন অফ ফেইথ
বিজয় চন্দ্র বর্মনঃ অবশেষে সিনেমা হলে মুক্তি পেতে চলেছে রাজবংশী ভাষায় নির্মিত পূর্ন দৈর্ঘ্যের ছায়াছবি বিহান- টিউন অফ ফেইথ। নতুন ইংরেজি বছরের ১৩ ই জানুয়ারী ছবিটি উত্তরবঙ্গ, কলকাতা ও আসামের বিভিন্ন সিনেমা হলে একযোগ মুক্তি পাবে। পরিচালক মেকার সৌরভের এক সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে তৈরি রাজবংশী ভাষার ছবি ‘বিহান’ টিউন অফ ফেইথ। ছবিটি সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার আগেই ইতিমধ্যে দেশ বিদেশের দশ দশটি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে। ঢাকা, বাংলাদেশ, কলোম্বিয়া, লন্ডন, দেরাদুন, উত্তরাখন্ড, হরিয়ানা, লক্ষৌ সহ বিভিন্ন দেশে ছবিটি প্রদর্শিত ও প্রশংসা লাভ করেছে। যা রাজবংশী সিনেমার ইতিহাসে এক অনন্য নজির বলে মনে করছেন উত্তরের চলচ্চিত্র মহল। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত ২৭ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে। উঠতি পরিচালক মেকার সৌরভ এর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এক দুর্দান্ত রাজবংশী ভাষার সেন্সর প্রাপ্ত পূর্ন দৈর্ঘ্যের ছবি নতুন বছরে সিনেমা প্রেমী দর্শকদের উপহার দিতে চলেছে বিহান টিম। ছবির কাহিনী ও পরিচালনায় মেকার সৌরভ। সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন মেকার সৌরভ ও রৌনক দাস। ভাষা ট্রান্সলেশন করেছেন বিশিষ্ট পঞ্চানন অনুরাগী তথা পঞ্চানন বর্মা বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপনের অন্যতম কারিগর গিরিন্দ্র নাথ বর্মন,সাহিত্যিক রেজাউল করিম খন্দকার ও রোপ আক্তার আহমেদ । ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসাম তথা উত্তরবঙ্গে প্রচুর সিনেমা, ভিডিও এলবামে কাজ করে বহু প্রশংসিত দুষ্টু মিষ্টি নায়িকা মিরিন্ডা দাস। এছাড়াও ছবিতে অভিনয় করেছেন তুষার চৌধুরী, সুধীর রায়, গীতা রায়, বিজয় চন্দ্র বর্মন, অসিমা বেগম, দেবিকা জেলে, ব্রতী রায়, সুশীল রায়, শরৎ বর্মন,ভবানী দাস, চন্দ্র কান্ত বর্মন, গোলাপ রাসেদ, বিশ্বজিৎ চাকলাদার সহ আরও একঝাঁক অভিনেতা অভিনেত্রী। ছবির লোকেশন উত্তরবঙ্গ ও আসাম। ক্রাউডফান্ডেড ইন্ডিপেন্ডেন্ট রাজবংশী ফিচার ফিল্ম ” বিহান- টিউন অফ ফেইথ”।
বিহানের সকল কাস্ট, ক্রু মেম্বার, টেকনিশিয়ানস, স্পনসর এবং যারা অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন ও মানসিকভাবে সাহস যুগিয়েছেন তাদের অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন পরিচালক মেকার সৌরভ ।
বিহানের জার্নি শুরু হয় ২০১৮ সাল থেকে। একটু একটু করে ফান্ডিং জোগাড় করে সকলের সহযোগিতায় ছবিটির স্যুটিং সম্পূর্ণ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে । তারপর বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয় বিহান।
একটি আঠারো বছর বয়সী গ্রামের মেয়ে (কোয়েল) তার বারো বছর বয়সী বন্ধু কানাইকে নিজের বিয়ের খবর দেয়। এটি ছোট ছেলেটির মনের মধ্যে বিয়ে, সামাজিক নিয়ম এবং বিয়েকে কেন্দ্র করে নানা রকমের ঐতিহ্য নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করে। হতাশায় সে তিলতিল করে জমানো ভাঁড়ের টাকা কোয়েলের কাছে নিয়ে গিয়ে নিষ্পাপ মনে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং প্রতিশ্রুতি দেয় যে সব জমানো টাকা দিয়ে সে সংসার পাতবে। কিন্তু কোয়েল কানাইয়ের প্রস্তাবের পর কি করলো ? কোয়েল আর বারো বছরের কানাইয়ের প্রেম কি শেষ পর্যন্ত পরিনতি পেল? এসব জানতে তো আপনাকে সিনেমা হলে আসতেই হবে। যখন এই মধুর অধ্যায়টি চলতে থাকে, তখন দূর দিগন্তে সমস্যা তৈরি করে সামাদ। সে পেশায় একজন গাড়ি চালক। যে সপ্তাহ খানেক আগে কাজ শেষে বাড়ি ফিরে আসে এবং সংসারের কোন দায়িত্ব গ্রহণ না করে শুধু মাতাল হয়ে স্ত্রীকে মারধর করতে থাকে। সমস্যাটি এক সময় এমন একটা পর্যায়ে চলে যায় যে গ্রামের প্রধানকে গ্রাম্য সভা করে বিষয়টির সমাধান করার চেষ্টা করতে হয়। গ্রামের এই দুটি স্বতন্ত্র ভিন্ন গল্প নিয়তির অমোঘ টানে যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এবং কিছু অভূতপূর্ব ঘটনাবলির সৃষ্টি হয়।
উত্তরবঙ্গ সহ আসামে প্রচুর রাজবংশী ভাষার সিনেমা তৈরী হলেও দু একটি বাদে বেশিরভাগ সিনেমাই বাজিমাৎ করতে পারেনি।কারন আধুনিক টেকনোলজি ও মন ছুঁয়ে যাওয়া চিত্রনাট্য না থাকায় এবং খুব কম বাজেটের ছবি হওয়ায় সাদামাটা এই ছবিগুলি মানুষের মনে দাগ কাটতে পারেনি। এছাড়াও উত্তরবঙ্গে সিনেমা তৈরীর যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাব ও প্রোডিউসার না থাকায় রাজবংশী ভাষায় হিট সিনেমা তৈরী করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে বর্তমানে রাজবংশী ভাষার বেশ কিছু হিট গান জনপ্রিয়তা লাভ করায় ক্রমশ এই ভাষার সিনেমার প্রতিও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের কাহিনীকার, পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা বর্তমানে রাজবংশী ভাষার নাচ, গান ও গল্পে বর্তমান কালের দর্শকদের রুচি চাহিদার কথা ভেবে টক ঝাল মিষ্টি যুক্ত করায় সব ভাষাভাষী মানুষদেরই হৃদয়গ্রাহী হবে বলে বিশ্বাস পরিচালকের। আর এভাবেই রাজবংশী নাচ,গান, সিনেমা, কমেডি নাটক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
উত্তরবঙ্গে ফিল্মসিটি তৈরি হলে যে কোনও ভাষার সিনেমা নির্মান সহজ হবে। উত্তরবঙ্গে ছুটে এসে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে প্রচুর হিট হিট ছবি তৈরি করছেন টলিউড, বলিউডের পরিচালকরা। অথচ উত্তরবঙ্গের পরিচালকরা তা করে উঠতে পারছেন না। তাই কলকাতার টেকনিশিয়ানদের দিয়ে উত্তরবঙ্গে রাজবংশী সিনেমা তৈরি করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন পরিচালক মেকার সৌরভ । উত্তরবঙ্গের উঠতি অভিনেতা অভিনেত্রীদের দিয়ে উত্তরবঙ্গেই ছবিটির সিংহ ভাগ সুটিং হয়েছে।পরিচালক মেকার সৌরভ উত্তরবঙ্গের ছেলে হলেও সিনেমা সূত্রে তিনি কলকাতাতেই থাকেন। ছবি পরিচালনার কাজ শিখে প্রথম রাজবংশী ভাষায় একটি সিনেমা তৈরী করার স্বপ্ন তার দীর্ঘ দিনের। আর এই সিনেমার মধ্য দিয়েই তার পরিচালক হিসাবে পথ চলা শুরু হবে বলে তিনি জানান। কারন উত্তরবঙ্গের এই জনজাতির ভাষায় নির্মিত ছবিটিকে তিনি বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চান। শুভ মুক্তির আগেই সাড়া ফেলে দিয়েছে এই ছবি। এখন শুধু সিনেমা হলে মুক্তির অপেক্ষায়।