৩৫০ বছরের পুরনো রীতি অনুসারে আজও পূজিত হন চাঁচলের রাজবাড়ির সিংহ বাহিনী

নিউজ ডেস্ক,মালদা: সপ্তাদশ শতাব্দীর শেষভাগ৷ সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি৷ শুধু বাংলা নয়, বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিল৷ দোর্দণ্ডপ্রতাপ হলেও প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ হিসাবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ভারত জুড়ে৷ ঘরে বসে নয়, হাতির পিঠে চেপে তিনি নিয়মিত বেরিয়ে পড়তেন নিজের রাজত্ব দেখাশোনা করতে৷ গঙ্গা-মহানন্দার দু’পাড়ে উর্বরা জমির চাষ পরিদর্শন, প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবরাখবর নেওয়া ছিল তাঁর রোজনামচা৷ রাজবাড়ি থেকে বেরোনোর পর কখনও কয়েকদিন, কখনও বা মাসাধিককাল পেরিয়ে ঘরে ফিরতেন৷ কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী৷ রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভুজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে৷ রাজাকে সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ শুরু করতে হবে দুর্গাপুজো৷ দেবীর আদেশ পেয়ে পরদিন সকালেই সতীঘাটায় চলে যান রাজা৷ স্বপ্নাদেশে বর্ণিত জায়গায় নদীতে নেমে তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি৷ সেবার থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো৷ সেই পুজোর বয়স প্রায় ৩৫০ বছর হতে চলল৷
দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামচন্দ্র৷ সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো৷ পরবর্তীতে ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রাজা৷ আদেশ অনুযায়ী সতীঘাটায় দেবীর আরেকটি মন্দির নির্মাণ করেন তিনি৷ তবে প্রথমে সেখানে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়েই মন্দির তৈরি করা হয়৷ পরবর্তীতে রাজবংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয়৷ ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে৷ এখনও সেখানে রয়েছে সেই দুর্গাদালান৷ প্রতি বছর এখানেই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়৷ পাকা মন্দির নির্মাণের পর রাজা শরৎচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় সাত হাজার টাকা বরাদ্দ করেন৷ সেই সময় টাকার অংকটি নেহাত কম নয়৷ প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে৷ দশমী তিথিতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান৷
সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটাই৷ এখন সেই রাজা নেই, রাজ্যপাটও নেই৷ চাঁচল রাজবাড়িতেই এখন স্থাপিত হয়েছে কলেজ, মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালত সহ একাধিক সরকারি দপ্তর৷ তবে রাজবাড়ির একাংশে থাকা ঠাকুরবাড়ি এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে৷ বর্তমানে চাঁচলরাজ ট্রাস্টি বোর্ড রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ি এবং রাজাদের প্রবর্তিত বিভিন্ন পুজো, মন্দির সংস্কার ইত্যাদি দেখাশোনা করে৷ ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারভাইজার পিনাকীজয় ভট্টাচার্য জানালেন, “এই পুজো অন্তত ৩০০ বছর পেরিয়ে গেল৷ কথিত আছে, ওই জায়গায় মহানন্দার তীরে এই রাজ পরিবারের একজন সতী হয়েছিলেন৷ তখন থেকেই জায়গাটি সতীঘাটা নামে পরিচিত৷ মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহারাজ রামচন্দ্র রায়চৌধুরি নদী থেকে অষ্টধাতুর চণ্ডী বিগ্রহ পান৷ তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজো শুরু হয়৷ পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি, শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরি এখানে রাজত্ব করেন৷ পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্ব ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়৷ কলকাতা হাইকোর্টের আদেশে শরৎচন্দ্রের রাজত্বের অংশ আসে রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল ট্রাস্টির মালিকানায়৷ এই ট্রাস্টি বোর্ডের একটি লোকাল ম্যানেজিং কমিটিও রয়েছে৷ এই কমিটি রাজত্বের আয়ব্যয়ের হিসাব সরকারকে পাঠায়৷ তার ভিত্তিতে এখানে একটি বাজেট পাঠানো হয়৷ সেই বাজেট মেনেই এখন রাজ পরিবারের সমস্ত খরচ বহন করা হয়৷ বাজেটে রাজত্বের সমস্ত ব্যয়ের জন্য বছরে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে রাজাদের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পুজো, রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, ঠাকুরবাড়ির নিত্যপুজো প্রভৃতি৷ বাজেট অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে পাহাড়পুর দুর্গাপুজোর জন্য নয় হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ তবে এই বাজারে এত কম টাকায় পুজো সম্ভব নয়৷ গ্রামবাসীরা আমাদের অনুমতি নিয়ে ওই পুজোয় অর্থ সাহায্য করে৷ এই পুজোর বৈশিষ্ট্য, কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ হয়৷ এবার মলমাসের জন্য একমাস আগেই সেই পুজো শুরু হয়েছে৷ সপ্তমীর দিন মিছিল সহকারে ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে পুজো নিতে যান৷ অষ্টমীতে কুমারীপুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে৷ দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে ঠাকুরবাড়ি চলে আসেন সিংহবাহিনী৷ সেখানেই তাঁর ভোগ রান্না হয়৷ কথিত আছে, একসময় সতীঘাটার মহানন্দার পশ্চিমপাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল৷ তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, গোধুলি লগ্নে বিসর্জনের সময় তারা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখায়৷ তখন থেকেই প্রতি বছর বিসর্জনের সেখানকার মুসলমানরা হাতে লণ্ঠন, মোমবাতি, এখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে মাকে পথ দেখায়৷ আমিও গত ৫০ বছর ধরে সেই প্রথা দেখে আসছি৷”
পাহাড়পুর দুর্গাদালানের পুরোহিত অচিন্ত্যকুমার মিশ্র বলেন, “৩৫০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছে৷ কথিত আছে, তৎকালীন রাজমাতা স্বপ্নাদেশে সতীঘাটায় একটি চণ্ডীমূর্তি পেয়েছিলেন৷ ওই মূর্তি রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন হয়৷ আগে এখানে একটি কুঁড়েঘর ছিল৷ পরবর্তীতে এখানে দুর্গাদালান তৈরি হয়৷ সপ্তমীতে বহু ভক্তের উপস্থিতিতে মা সিংহবাহিনী এখানে আসেন৷ দশমী পর্যন্ত মা এখানেই থাকেন৷ সেদিন মা ফের রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে ফিরে যান৷ পুজোর কয়েকদিন প্রচুর মানুষ এখানে উপস্থিত হয়৷ তবে এবার কোরোনার জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকবে৷”
এদিকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজারি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্বকালে রাজমাতা সতীঘাটায় মহানন্দা নদী থেকে অষ্টধাতুর এই মূর্তি পান৷ যতদূর জানা আছে, প্রথমে সেখানেই একটি কুঁড়ে নির্মাণ করে মুর্তিটি রাখা হয়েছিল৷ পরে মাকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয়৷ প্রতি বছর সপ্তমীতে মাকে পাহাড়পুর দুর্গাদালানে চারদিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷ আগে হাতিতে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হত৷ এখন আমিই মাকে মাথায় চাপিয়ে সেখানে নিয়ে যাই৷ একইভাবে দশমীতে ফের ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসি৷ এবার কোরোনার জন্য নিয়ম কিছু বদলানো হয়েছে৷ পাহাড়পুরে কোরোনা বিধি মেনেই পুজো হবে৷”

বছরের পুরনো রীতি অনুসারে আজও পূজিত হন চাঁচলের রাজবাড়ির সিংহ বাহিনী

নিউজ ডেস্ক,মালদা: সপ্তাদশ শতাব্দীর শেষভাগ৷ সেই সময় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার রাজা ছিলেন রামচন্দ্র রায়চৌধুরি৷ শুধু বাংলা নয়, বিহারের কিছু অংশও তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিল৷ দোর্দণ্ডপ্রতাপ হলেও প্রজাদরদী এবং ধর্মপ্রাণ হিসাবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব ভারত জুড়ে৷ ঘরে বসে নয়, হাতির পিঠে চেপে তিনি নিয়মিত বেরিয়ে পড়তেন নিজের রাজত্ব দেখাশোনা করতে৷ গঙ্গা-মহানন্দার দু’পাড়ে উর্বরা জমির চাষ পরিদর্শন, প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবরাখবর নেওয়া ছিল তাঁর রোজনামচা৷ রাজবাড়ি থেকে বেরোনোর পর কখনও কয়েকদিন, কখনও বা মাসাধিককাল পেরিয়ে ঘরে ফিরতেন৷ কথিত আছে, একবার তিনি যখন এভাবেই রাজত্ব দেখতে বেরিয়ে বাইরে রাত কাটাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন দেবী চণ্ডী৷ রাজাকে তিনি আদেশ দিয়েছিলেন, মহানন্দার সতীঘাটায় তাঁর চতুর্ভুজা অষ্টধাতু নির্মিত মূর্তি রয়েছে৷ রাজাকে সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ শুরু করতে হবে দুর্গাপুজো৷ দেবীর আদেশ পেয়ে পরদিন সকালেই সতীঘাটায় চলে যান রাজা৷ স্বপ্নাদেশে বর্ণিত জায়গায় নদীতে নেমে তুলে আনেন দেবী চণ্ডীর মূর্তি৷ সেবার থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো৷ সেই পুজোর বয়স প্রায় ৩৫০ বছর হতে চলল৷
দেবী চণ্ডীর অষ্টধাতুর মূর্তি সতীঘাটা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে রাজবাড়িতে এনে প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামচন্দ্র৷ সেদিন থেকেই রাজবাড়িতে শুরু হয় দেবীর নিত্যপুজো৷ পরবর্তীতে ফের দেবীর স্বপ্নাদেশ পান রাজা৷ আদেশ অনুযায়ী সতীঘাটায় দেবীর আরেকটি মন্দির নির্মাণ করেন তিনি৷ তবে প্রথমে সেখানে মাটির ঘর ও খড়ের ছাউনি দিয়েই মন্দির তৈরি করা হয়৷ পরবর্তীতে রাজবংশের অন্যতম রাজা শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির নির্দেশে তৎকালীন ম্যানেজার সতীরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে সেখানে পাকা দুর্গাদালান নির্মিত হয়৷ ততদিনে জায়গাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাহাড়পুর হয়েছে৷ এখনও সেখানে রয়েছে সেই দুর্গাদালান৷ প্রতি বছর এখানেই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়৷ পাকা মন্দির নির্মাণের পর রাজা শরৎচন্দ্র দুর্গাপুজোর জন্য সেই সময় সাত হাজার টাকা বরাদ্দ করেন৷ সেই সময় টাকার অংকটি নেহাত কম নয়৷ প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও সপ্তমী তিথিতে রাজবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে নিয়ে আসা হয় অষ্টধাতুর চতুর্ভুজা মা চণ্ডীকে৷ দশমী তিথিতে তিনি ফের রাজবাড়িতে ফিরে যান৷
সময় বয়ে গিয়েছে অনেকটাই৷ এখন সেই রাজা নেই, রাজ্যপাটও নেই৷ চাঁচল রাজবাড়িতেই এখন স্থাপিত হয়েছে কলেজ, মহকুমা প্রশাসনিক ভবন, আদালত সহ একাধিক সরকারি দপ্তর৷ তবে রাজবাড়ির একাংশে থাকা ঠাকুরবাড়ি এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে৷ বর্তমানে চাঁচলরাজ ট্রাস্টি বোর্ড রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ি এবং রাজাদের প্রবর্তিত বিভিন্ন পুজো, মন্দির সংস্কার ইত্যাদি দেখাশোনা করে৷ ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারভাইজার পিনাকীজয় ভট্টাচার্য জানালেন, “এই পুজো অন্তত ৩০০ বছর পেরিয়ে গেল৷ কথিত আছে, ওই জায়গায় মহানন্দার তীরে এই রাজ পরিবারের একজন সতী হয়েছিলেন৷ তখন থেকেই জায়গাটি সতীঘাটা নামে পরিচিত৷ মা চণ্ডীর স্বপ্নাদেশে মহারাজ রামচন্দ্র রায়চৌধুরি নদী থেকে অষ্টধাতুর চণ্ডী বিগ্রহ পান৷ তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজো শুরু হয়৷ পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র রায়চৌধুরি, শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরি এখানে রাজত্ব করেন৷ পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্ব ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়৷ কলকাতা হাইকোর্টের আদেশে শরৎচন্দ্রের রাজত্বের অংশ আসে রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল ট্রাস্টির মালিকানায়৷ এই ট্রাস্টি বোর্ডের একটি লোকাল ম্যানেজিং কমিটিও রয়েছে৷ এই কমিটি রাজত্বের আয়ব্যয়ের হিসাব সরকারকে পাঠায়৷ তার ভিত্তিতে এখানে একটি বাজেট পাঠানো হয়৷ সেই বাজেট মেনেই এখন রাজ পরিবারের সমস্ত খরচ বহন করা হয়৷ বাজেটে রাজত্বের সমস্ত ব্যয়ের জন্য বছরে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে রাজাদের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পুজো, রাজবাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, ঠাকুরবাড়ির নিত্যপুজো প্রভৃতি৷ বাজেট অনুযায়ী ২০১৩ সাল থেকে পাহাড়পুর দুর্গাপুজোর জন্য নয় হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ তবে এই বাজারে এত কম টাকায় পুজো সম্ভব নয়৷ গ্রামবাসীরা আমাদের অনুমতি নিয়ে ওই পুজোয় অর্থ সাহায্য করে৷ এই পুজোর বৈশিষ্ট্য, কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে দুর্গাদালানে কল্পারম্ভ হয়৷ এবার মলমাসের জন্য একমাস আগেই সেই পুজো শুরু হয়েছে৷ সপ্তমীর দিন মিছিল সহকারে ঠাকুরবাড়ি থেকে দুর্গাদালানে পুজো নিতে যান৷ অষ্টমীতে কুমারীপুজো প্রথম থেকেই হয়ে আসছে৷ দশমীর পুজো শেষে পাহাড়পুর থেকে ঠাকুরবাড়ি চলে আসেন সিংহবাহিনী৷ সেখানেই তাঁর ভোগ রান্না হয়৷ কথিত আছে, একসময় সতীঘাটার মহানন্দার পশ্চিমপাড়ে মহামারী দেখা দিয়েছিল৷ তখন দেবী সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, গোধুলি লগ্নে বিসর্জনের সময় তারা যেন মাকে আলো হাতে পথ দেখায়৷ তখন থেকেই প্রতি বছর বিসর্জনের সেখানকার মুসলমানরা হাতে লণ্ঠন, মোমবাতি, এখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে মাকে পথ দেখায়৷ আমিও গত ৫০ বছর ধরে সেই প্রথা দেখে আসছি৷”
পাহাড়পুর দুর্গাদালানের পুরোহিত অচিন্ত্যকুমার মিশ্র বলেন, “৩৫০ বছর আগে এই পুজো শুরু হয়েছে৷ কথিত আছে, তৎকালীন রাজমাতা স্বপ্নাদেশে সতীঘাটায় একটি চণ্ডীমূর্তি পেয়েছিলেন৷ ওই মূর্তি রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তখন থেকেই পাহাড়পুরে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন হয়৷ আগে এখানে একটি কুঁড়েঘর ছিল৷ পরবর্তীতে এখানে দুর্গাদালান তৈরি হয়৷ সপ্তমীতে বহু ভক্তের উপস্থিতিতে মা সিংহবাহিনী এখানে আসেন৷ দশমী পর্যন্ত মা এখানেই থাকেন৷ সেদিন মা ফের রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে ফিরে যান৷ পুজোর কয়েকদিন প্রচুর মানুষ এখানে উপস্থিত হয়৷ তবে এবার কোরোনার জন্য কিছু বিধিনিষেধ থাকবে৷”
এদিকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়ির নিত্যপূজারি ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “রাজা রামচন্দ্র রায়চৌধুরির রাজত্বকালে রাজমাতা সতীঘাটায় মহানন্দা নদী থেকে অষ্টধাতুর এই মূর্তি পান৷ যতদূর জানা আছে, প্রথমে সেখানেই একটি কুঁড়ে নির্মাণ করে মুর্তিটি রাখা হয়েছিল৷ পরে মাকে রাজবাড়ির ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসা হয়৷ প্রতি বছর সপ্তমীতে মাকে পাহাড়পুর দুর্গাদালানে চারদিনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷ আগে হাতিতে চাপিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হত৷ এখন আমিই মাকে মাথায় চাপিয়ে সেখানে নিয়ে যাই৷ একইভাবে দশমীতে ফের ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসি৷ এবার কোরোনার জন্য নিয়ম কিছু বদলানো হয়েছে৷ পাহাড়পুরে কোরোনা বিধি মেনেই পুজো হবে৷”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *