চোখের বিরল রোগে আক্রান্ত হরিশিক, চলাফেরাতেও অক্ষম, চিকিৎসা করাতে সর্বস্বান্ত বাবা
ক্ষীরোদা রায়, ধূপগুড়ি : অক্ষি কোটর থেকে বাইরে বেরিয়ে আছে চোখের মণি সহ সমগ্র অংশই। বাইরে বেরিয়ে ফুলে আছে চোখ, চোখে দেখতেও পারে না। কথাও বলতে পারেনা, এমনকি হাঁটতেও পারে না আট বছরের হরিশিক রায়। বিরল রোগে আক্রান্ত হরিশিক ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং ১ অঞ্চলের কাজিপাড়া গ্রামের কুঠির বাড়ি কলোনিতে বাস। বাড়ির তিরিশ মিটার দূরে বয়ে চলছে ডুডুয়া নদী। ধূপগুড়ি, শিলিগুড়ি, কলকাতা, নেপাল কত জায়গায় কত ডাক্তার দেখিয়েও ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে পারেননি মিষ্টির দোকানের কারিগর বাবা প্রভাত রায় ও দিনমজুর মা জোৎস্না রায়।জোৎস্নার কোল আলো করে ফুটফুটে হরিশিকের জন্ম হয়েছিল আট বছর আগে। জন্মের পর ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে উঠছিল সে। কিন্তু সাত বছর আগে অজানা কোন কারণে হরিশিকের শরীরে বদল আসতে থাকে। গত কয়েক বছর যাবৎ চিকিৎসার পরেও সুস্থ হয়নি সে। চিকিৎসার জন্য ধূপগুড়ি, শিলিগুড়ি নিয়ে যান। চোখের চিকিৎসার জন্য নেপালের মেচির চক্ষু হাসপাতালেও নিয়ে যান তাঁদের কনিষ্ঠ সন্তানকে। হরিশিকের তিন দাদা ও এক দিদি। দুই দাদা কিশোর বয়সে ভিণ রাজ্যে যায় শ্রমিকের কাজে। বাবা প্রভাত রায় ধূপগুড়ি শহরে রবি ঘোষের মিষ্টির দোকানের কারিগর। দৈনিক চারশো টাকা মজুরি। হরিশিকের মা জোৎস্না রায় জানান, “হরিশিকের জন্য দিনে আড়াই লিটার দুধ, এছাড়া ল্যাকটোজেন দরকার। তরল খাবার ছাড়া অন্য কিছু গিলতে পারেনা সে।” জ্যোৎস্না রায় বলেন, “ওর বাবার রোজগারের টাকায় আমার ছেলের খাবার জিনিস কিনতেই শেষ হয়, দুই ছেলে কেরালায় শ্রমিকের কাজ করে। আমি নিজে মানুষের জমিতে দৈনিক হাজিরা কাজ করি।”প্রভাত রায়ের বাড়ি ডুডুয়া নদীর ধারেই অবস্থিত। যাতায়তের রাস্তা নেই। প্রতি বছর বন্যায় ডুবে যায় বাড়ি। বাড়িতে পানীয় জল নেই। নেই চাষবাসের জমি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, গ্রাম প্রধান এমনকি জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের পুর্ত কর্মাধ্যক্ষ নূরজাহান বেগম ও ধূপগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক মিতালী রায়কেও হরিশিকের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও ছোট্ট শিশুটির চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করে উঠতে পারেননি প্রভাত রায়। হরিশিকের পিসি আলো রায় বলেন, “নূরজাহান বেগম ও মিতালী রায়ের কাছে চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাওয়া হয়, মিতালী রায়ের বাড়িতেও নিয়ে যাই অসুস্থ ভাইপোকে। সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করে দিতে পারেননি কেউ।” একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী হলেও হরিশিক অবশ্য প্রতিবন্ধী ভাতা পান না। হরিশিকের বাবা প্রভাত রায় বলেন, “সামান্য রোজগারে ছেলের চিকিৎসা করাতে বহু টাকা খরচ হয়েছে, অন্য দুই ছেলে কেরালায় কাজ করে সংসারে সাহায্য করে। কিন্তু ছোট ছেলের চিকিৎসা ও খাবারের খরচ সহ গোটা সংসার চালাতে হিমসিম অবস্থা হয়েছে।” তিনি বলেন, “বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে একটি ঘরের মেঝে পাকা করেছি বন্যার কারণে, এর বাইরে কিছুই নেই আমার।”ডুডুয়া দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গিয়েছে। ছেলের চিকিৎসা করাতে প্রতিশ্রুতিও জমা হয়েছে অনেক। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি দরিদ্র এই পরিবারের অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা করাতে।