সূর্যমুখী ফুলের চাষে সাকোয়াঝোড়া এখন সূর্যমুখী গ্রাম, ফুল বাগানে উৎসাহীদের আনাগোনা

ক্ষীরোদা রায়, ধূপগুড়ি: পনের বিঘা জমির ওপর সূর্যমুখী ফুলের বাগান। চৈত্রের রোদ ঝলমলে দিনে মধুকরদের গুঞ্জনে মুখরিত বাগান। উৎসাহী মানুষের আনাগোনা রোজ লেগেই রয়েছে। বাগান দেখতে আসা উৎসাহীরা মোবাইলে বন্দী করে রাখছে মুহুর্তগুলোকে। ধূপগুড়ির সাকোয়াঝোড়া ১ অঞ্চলের উত্তর ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম এখন সূর্যমুখী গ্রাম হিসেবেই পরিচিত।এমন ফুলবাগান পেয়ে স্থির থাকতে পারেননি রাজবংশী চলচ্চিত্র নির্মাতা তপন রায়। আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই ফুল বাগানে ভিডিও এলবামের শ্যুটিং করেছেন গত রবিবার। গ্রামে সূর্যমুখী চাষ ঘিরে মানুষের উৎসাহের অন্ত নেই। একটি অ-সরকারি সংস্থার উদ্যোগে লাভজনক কৃষি হিসেবে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে কালুয়া নদীর পারের এই গ্রামে।জানা গিয়েছে, নাবার্ডের আর্থিক সহযোগিতায় কিশলয় ফার্মাস প্রডিউসার কোম্পানির সঙ্গে গ্রামের কৃষকরা যৌথ উদ্যোগে প্রায় পনের বিঘা জমির ওপর চাষ করেছেন সূর্যমুখী ফুলের। আর কিছুদিন পরেই ফুল থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন কৃষকেরা। কিশলয় ফার্মাস প্রডিউসার কোম্পানির অন্যতম সদস্য তথা কৃষক সুশান্ত মহন্ত জানান, “লাভজনক কৃষি হিসেবে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। মূলত সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল তৈরি করা হয়। আমরা সূর্যমুখী বীজ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করব জলপাইগুড়ির অ্যাগ্রো বিজনেস মার্কেটিং অফিসে।” চাষের খরচ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কৃষক বিপুল রায় বলেন, “সেই অর্থে সূর্যমুখী চাষে খরচ খুব কম, সার দরকার হয়েছে। বৃষ্টির হওয়ার কারণে সেই অর্থে সেচের খরচ ততটা হয়নি।”উত্তরবঙ্গের মধ্যে ধূপগুড়ি ব্লকে সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়। লাভজনক কৃষি হিসেবে আলু চাষকেই কৃষকেরা প্রাধান্য দেন। সাকোয়াঝোড়া ১ অঞ্চলের কৃষকেরা আলুর পরিবর্তে এবছর সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে আলু চাষের খরচের তুলনায় সূর্যমুখী চাষে খরচ অতি সামান্যই, আলুর চেয়ে সূর্যমুখীতে লাভ বেশি বলে তারা বলেন। কৃষক পূর্ণচন্দ্র রায় ও মহিন্দ্র রায় বলেন, আমরা বিকল্প চাষের লক্ষ্যে এগোচ্ছি, সরকারি সহযোগিতা আমাদের উৎসাহ বাড়িয়েছে। এই ফুল চাষের সাথে ভবিষ্যতে মৌমাছি চাষ করাও যাবে বলে জানান তিনি।গ্রামের বুকে এত বড়ো সূর্যমুখী ফুলের বাগান পেয়ে রাজবংশী চলচ্চিত্র পরিচালক তপন রায়ের মন স্থির থাকতে পারেনি। ঐ গ্রামেরই বাসিন্দা তিনি।

বৃহদায়তনের ফুল বাগান হাতের কাছে পেয়েছেন, তাই সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। গত রবিবার রাজবংশী-কামতাপুরী গানের একটি ভিডিও এলবামের শ্যুটিং করেছেন তিনি। সূর্যমুখী ফুলের বাগানে আরও বেশি ফুলের সমাহার ঘটেছিল রঙবেরঙের পাটানি পরে আসা অভিনেত্রীদের উপস্থিতিতে। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাটানি পরে ফুল বাগানে নাচলেন কলাকুশলীরা। পরিচালক তপন রায় বলেন, উত্তরবঙ্গের বুকে এত বড়ো ফুলের বাগান আর পাওয়া যাবেনা, এখানে বসন্ত ঝতুর উপর রাজবংশী-কামতাপুরী ভাষায় একটি গানের এলবামের শ্যুট করি। স্থানীয় যুবক তারিনী রায় বলেন, বিকেল হলেই প্রেমিক-প্রেমিকা জুটি থেকে শুরু করে উৎসাহী মানুষজনের আনাগোনা লেগেই রয়েছে। তবে অনেকেই অতি উৎসাহে চুপিসারে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যান। এভাবে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকেরা। কৃষকদের সূর্যমুখী চাষ করা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ধূপগুড়ি ব্লকের কৃষি আধিকারিক তিলক বর্মন বলেন, আমরা সূর্যমুখী চাষ নিয়ে কৃষকদের উৎসাহ করেছি এবং যাতে লাভজনক এই কৃষিজ ফসল চাষের সম্প্রসারণ হয় তার জন্য কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *