উন্নয়ন বঞ্চিত ধূপগুড়ির মুন্ডাপাড়ায় উন্নয়ন চায় বাসিন্দারা
ক্ষীরোদা রায়, ধূপগুড়ি: গাদং ১ অঞ্চলের কাজিপাড়া গ্রামের মুন্ডাপাড়া ধূপগুড়ি ব্লক এমনকি জলপাইগুড়ি জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন উন্নয়ন বঞ্চিত এক জনপদ। মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠির সংখ্যাধিক মানুষের বসবাস হলেও রাজবংশী ও সামান্য অংশে সংখ্যালঘু মূসলিম ও নমঃশূদ্র সমাজের মানুষের বসবাস ঐ ছোট্ট জনপদে।
ডুডুয়া নদী জলপাইগুড়ি জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে কাজিপাড়ার মুন্ডাপাড়াকে। এই নদী জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার সীমনা হিসেবে চিহ্নিত। নদীর ওপারে জলপাইগুড়ি জেলার ছোট্ট এই জনপদ অবস্থিত। শুধু তাই নয় মুন্ডাপাড়াকে বিভাজিত করে রেখেছে শিঙিমারি বা বারবাঁক নদী। দ্বিখণ্ডিত মুন্ডাপাড়ায় শিঙিমারি নদীর ওপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোর উপর মরচে ধরা টিন বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার ওপর দিয়ে দুই প্রান্তের মানুষের যাতায়ত চলে। তবে কংক্রিটের পাকা সেতু নির্মাণ যে করা হয়নি তা নয়। সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ডুডুয়া ও শিঙিমারি নদীর সংযোগ স্থলে ডুডুয়া নদীর বাঁধের উপর। এ বছর বর্ষায় সেই সেতু ভেঙে পড়ে আছে নদীর যুবক এলাকার বাসিন্দা বিজেপি নেতা দীপক রায় বলেন, গত বর্ষায় বন্যায় ভেঙে যায় নদীবাঁধের ওপর থাকা সেতুটি। সেতু না থাকায় দুই প্রান্তের মানুষের সমস্যা বেড়েছে।কাজিপাড়ার মুন্ডাপাড়ায় নেই পাকা সড়ক, পরিশ্রুত পানীয় জল। প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই, আছে একটিমাত্র শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। একশো মিটার কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হয়েছে ডুডুয়া নদীর পার থেকে মুন্ডাপাড়া শিশুশিক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত।ডুডুয়া নদীর পারে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও প্রতি বছর বর্ষায় বন্যা থেকে নিস্তার পাননা মুন্ডাপাড়াবাসী। এক কোমড় পর্যন্ত জল ওঠে এলাকায়। বর্ষায় নিদারুন কষ্টে দিনযাপন করতে হয় তাদের। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, গ্রামের এই অংশে পরিশ্রুত পানীয় জলের সমস্যা প্রবল। সরকারি উদ্যোগে পানীয় জলের ব্যবস্থা না করায় তারা নিজেদের উদ্যোগে নলকূপ বসিয়ে জল সমস্যা মেটাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। একটি নলকূপ থেকে তিন চারটি পরিবার জল সংগ্ৰহ করেন বলে বাসিন্দাদের দাবি। গ্রামবাসী রেজিয়া খাতুন বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নলকূপ দেয়নি, গরু বিক্রি করে নলকূপ বসাতে হয়েছে। আগে অন্যের বাড়ি থেকে খাওয়ার জল আনতে হতো, এখন আমরা দুটো পরিবার নিজেদের নলকূপ থেকে জল সংগ্রহ করি। তবে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সুলভ মূল্যে শৌচালয়ের ব্যবস্থা করেছে। এ বিষয়ে গাদং ১ নং অঞ্চলের অঞ্চল প্রধান নির্মল রায় বলেন, সেখানে পরিশ্রুত পানীয় জলের খুব দরকার।ফালাকাটা ব্লকের ধনীরামপুর ২ অঞ্চলের ঘাটপাড় সরুগাঁও গ্রামের ওপর দিয়ে ধূপগুড়ি ব্লক এমনকি জলপাইগুড়ি জেলার মূল ভূ-ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন এই এলাকায় প্রবেশ করতে হয়। ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে ডুডুয়া নদীর ওপর নৌকাই ভরসা বাসিন্দাদের। ঐ এলাকায় কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র একশো মিটার। বাকি অংশে খানাখন্দে ভর্তি মেঠো পথেই হাঁটতে হয় বাসিন্দাদের। গ্রামবাসী মীনা মুন্ডা বলেন, শীতের মরসুমে কাঁচা রাস্তায় চলতে অসুবিধা না হলেও, বর্ষার সময় কোথাও যাওয়া আসা করা যায় না। এলাকার পঞ্চায়েত ও প্রধান ঘুরে গেলেও কোন উদ্যোগ নেয়নি। এলাকার যুবক তথা বিজেপি নেতা দীপক রায় বলেন, চারদিকে উন্নয়নের আলো জ্বললেও আমরা অন্ধকারে পড়ে আছি, আমাদের নিয়ে কেউ ভাবেনা। বাসিন্দা টোপে মুন্ডা বলেন, এলাকায় চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট দরকার। এ বিষয়ে ঐ এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না।
ধূপগুড়ির মুন্ডাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তাদের দাবি যেই জয়লাভ করুন এই পাঁচ বছরে যেন তাদের দিকে নজর দেন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। উল্লেখ্য, ষাটটি পরিবারে দুশোর উপর ভোটার রয়েছে সেখানে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাদের ভোট একটা ফ্যাক্টর।