কামতাপুর বা গ্রেটার কোচবিহার নামেই হোক পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য, দাবি রাজ্যের দাবিদারদের
ক্ষীরোদা রায়: উত্তরবঙ্গ ও আসামের বেশ কয়েকটি জেলা নিয়ে এতদিন যা ছিল রাজবংশীদের দাবি, এখন সেই দাবি সার্বজনীনভাবে উঠে আসছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল উত্তরবঙ্গ পৃথক রাজ্য চাই। নির্বাচন শেষ হবার পরেই দাবি উঠছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পৃথক করে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য তৈরির। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারে গ্রুপ বানিয়ে জোরদার প্রচার চালাচ্ছে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য তৈরির দাবি জানিয়ে। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায় এবং বাকি জেলাগুলিতে ভালো ভোট পাওয়ায় বিজেপি পৃথক রাজ্যের দাবি তুলছে বলে। তবে পৃথক রাজ্যের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের পাশাপাশি নমশূদ্র, কায়স্থ বিভিন্ন অ-রাজনৈতিক সংগঠন। তারা চাইছেন উত্তরবঙ্গের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে পৃথক রাজ্য প্রয়োজন।তবে, যে দাবি উত্তরবঙ্গ ও অসমের রাজবংশীরা কামতাপুরী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছিল, সেই দাবি বর্তমানে উত্তরবঙ্গে জোরালো হয়েছে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে।
বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে বিজেপি ভালো ফল করার পর এই দাবি ওঠে। অনেকে মনে করছেন বিজেপি এই দাবি তুলছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে না পারায়। আবার অনেকের মতে, দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির উচ্চ নেতৃত্বের অনেক নেতাই ভোটে পরাজিত হওয়ায় উত্তরবঙ্গে বিজেপি নেতারা চাইছেন তারা তাদের মত করে চলবেন এবং উত্তরবঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিভাজন করাই একমাত্র পথ। আবার অনেকের মতে, উত্তরবঙ্গের ফলাফলে খুশি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্র সরকারে বিজেপি রয়েছে, বিজেপি সরকার সংসদে পৃথক রাজ্যের বিল পাশ করালে রাজ্য গঠন সম্ভব। কোচবিহারের বিজেপি নেতা জ্যোতিবিকাশ রায়, “উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত, উত্তরবঙ্গের কাছে পশ্চিমবঙ্গ হল সৎ মা। উত্তরবঙ্গকে চিরকাল বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। যারা পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি তুলছেন আমরা তাদের সমর্থন করি।” তবে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি পার্থ প্রতিম রায় ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন, গোটা বাংলার উন্নয়ন, শান্তি, সম্প্রীতি – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল লক্ষ্য। গত দশ বছর যেভাবে তিনি গোটা বাংলার জন্য নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন। আগামী বছরগুলিও আরও দৃঢ়তার সাথে তিনি উত্তরবঙ্গ, গৌড়বঙ্গ, রাঢ়বঙ্গ, দক্ষিনবঙ্গ অর্থাৎ গোটা বাংলায় তার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। তাই ইদানীং ফেসবুকে উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্যের অলীক স্বপ্ন না দেখে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের শরিক হোন।
উল্লেখ্য, কামতাপুর রাজ্য বা গ্রেটার কোচবিহার রাজ্যের জন্য উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্র মানুষ দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি দাবি আদায়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদলকে সমর্থন জানিয়েছে উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্র বিভিন্ন সংগঠন। বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর উত্তরবঙ্গ নামে পৃথক রাজ্যের দাবিকে তারা সমর্থন করছেন, ঠিকই তবে রাজ্যের নাম উত্তরবঙ্গ রাখতে চাননা তারা। তারা চান উত্তরবঙ্গ ও আসামের কয়েকটি জেলা নিয়ে পৃথক কামতাপুর বা গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য গঠন হোক। তার দাবি, কামতাপুর বা গ্রেটার কোচবিহার নামের যে ইতিহাস আছে উত্তরবঙ্গ নামকরণের সেই ইতিহাস নেই। তাদের দাবি উত্তরবঙ্গ বাঙালিদের দেওয়া নাম। বিশ্ব রাজবংশী উন্নয়ন মঞ্চের সম্পাদক গণেশ রায় বলেন, ‘পৃথক রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করি, কিন্তু উত্তরবঙ্গ এই নামকরণকে সমর্থন করিনা। এখানকার প্রাচীন ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাস অনুসারে রাজ্যের নাম কামতাপুর বা গ্রেটার কোচবিহার হলে ভালো। যদি কেউ উত্তরবঙ্গ নামকরনের পক্ষে দাবি জানায় আমরা তার বিরোধিতা করব। আমরা এখানে সবাই মিলে এক্যের সাথে বসবাস করব।’ রাজবংশী যুব মঞ্চের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শিলাজিৎ রায় বলেন, আলাদা রাজ্য কাম্য। আশির দশক থেকে রাজবংশীরা পৃথক রাজ্যের আন্দোলন করছে। তবে উত্তরবঙ্গ নামের প্রতি সমর্থন করব না। তবে অন্যান্য জনগোষ্ঠির মানুষ যে পৃথক রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করছে এর ফলে জোরদার আন্দোলন তৈরি হবে।