উত্তরবঙ্গে দলের খারাপ ফলের প্রভাব উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর মমতার হাতে
ক্ষীরোদা রায়: উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতেই রাখলেন। সদ্য বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়েছে। উত্তরবঙ্গের কালিম্পং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ফল সব থেকে খারাপ হয়েছে। তুলনায় দুই দিনাজপুর ও মালদায় তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফল করেছে। আলিপুরদুয়ার ও কালিম্পং জেলা দুটি তৃণমূল কংগ্রেস শাসনকালে গঠিত হয়। তৃণমূল আশা করেছিল এই দুটি জেলার মানুষ নিরাশ করবেনা, কিন্তু দুটি জেলাতেই খাতা খুলতে পারেনি দল। অপরদিকে কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে পাঁচটি আসন পায় তৃণমূল। দার্জিলিং জেলাতেও তৃণমূল আসন পায়নি। উল্লেখ্য, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলাতে তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েটদের পরাজয় ঘটেছে।
ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি আসনে গৌতম দেব, নাটাবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, শীতলকুচিতে পার্থপ্রতিম রায়, কোচবিহার দক্ষিণে বিনয় কৃষ্ণ বর্মণ, আলিপুরদুয়ারে সৌরভ চক্রবর্তী এবং ধূপগুড়িতে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মহিলা নেত্রী মিতালী রায় পরাজিত হয়েছেন। শিলিগুড়িতে রাজ্য নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র হেরেছেন। চারটি জেলায় দলের কান্ডারিদের পরাজয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। এমনকী নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একাধিক জায়গায়। যেমন নির্বাচনের পূর্বে এক সন্ন্যাসীকে মেজাজ দেখানোর গৌতম দেবের ভিডিও (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা হয়নি যদিও) প্রকাশ হয়েছিল। আবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিরুদ্ধে গৌতম বাবু অভিযোগ এনেছিলেন। অভিযোগ করেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের কাজ নিয়ে। অবশ্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে গৌতম বাবু একাধিক প্রকল্প সমাপ্ত করেন। দলের ভেতর নেতামন্ত্রীদের এই আচরণের প্রভাব বিধানসভা নির্বাচনে পড়ে। তার ফলে কিছুটা হলেও তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি হয়। এই অবস্থায় দলকে শক্ত জায়গায় নিয়ে আসতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর নিজের হাতে তুলে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়েছেন মালদার সাবিত্রী মিত্রকে।
মেরুকরণের রাজনীতির ব্যাপক প্রভাব পড়ে এবারের রাজনীতিতে। ধর্ম ও জাতপাতভিত্তিক রাজনীতি উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরন বদলে দেয়। দক্ষিণবঙ্গের চেয়ে উত্তরবঙ্গে তার প্রভাব বেশি করে পড়ে। ধর্মের মেরুকরণ ও ধর্মের ভেতর জাতপাতের মেরুকরণের রাজনীতি রাজনৈতিক দল হিসেবে বামফ্রন্টকে যেমন শক্ত জায়গায় ফেলে দিয়েছে, অপরদিকে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসকেও একটা চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দিয়েছে। ধর্ম ও জাতপাতের ভেদাভেদ মুছে ফেলে উত্তরবঙ্গকে উন্নয়নের মাপকাঠিতে এগিয়ে আনতে পারাই এখন লক্ষ্য হতে পারে তৃণমূলের। আর সেই কারণে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর নিজ হাতেই রেখেছেন মমতা।
তাছাড়া, দলের অভিজ্ঞ প্রার্থীদের পরাজয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মত গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সামলানোর মত বিধায়ক নেই। সেই কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই দপ্তর সামলাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার উন্নয়ন দিয়ে দলের সংকট কতটা দূর করতে পারেন মমতা।