পাগলি বুড়িকে তুষ্ট করে ফালাকাটার ধনীরামপুরে সূচনা হয় দূর্গা পূজার
ক্ষীরোদা রায়, ফালাকাটাঃ পাগলী বুড়িকে তুষ্ট করে সূচনা হয় দূর্গা পূজার। দূর্গা মায়ের সাথে দেবী রুপে পুজিত হন পাগলি বুড়ি। ফালাকাটার ধনীরামপুর ১ অঞ্চলের দেওমালি গ্রামের পাগলি বুড়ির ডাঙ্গা এলাকায় পূজা করা হয় পাগলি বুড়ির। ষষ্ঠী তিথিতে মহাকাল বাবার সাথে পাগলি বুড়িকে দেবী হিসেবেই আরাধনা করেন গ্রামবাসীরা। কল্পিত কোন লোকদেবী নন পাগলি বুড়ি, এলাকায় এক জীবন্ত মানবী ছিলেন বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে কত বছর আগে তিনি সেখানে বসবাস করেছিলেন সঠিক তথ্য দিতে পারেননি কেউ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, পাগলি বুড়ি নামে এক বৃদ্ধার বাস ছিল এখানে। তিনি ছিলেন আদিবাসী রমণী। সেই সময় ওই জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় বৃদ্ধা একাই বাস করতেন। পরিবারে তার কেউ ছিল না। বয়স হয়ে গেলে তাঁর মস্তিস্ক বিকৃতি হয়। সেই বৃদ্ধার বাস থেকেই এলাকার নাম হয়েছে পাগলি বুড়ির ডাঙ্গা। ডাঙ্গা বলতে স্থানীয় রাজবংশীরা জল দাঁড়িয়ে থাকে না এমন উঁচু জমিকে বোঝেন। উল্লেখ্য ১৮৭৮ সালে ডুয়ার্সে প্রথম চা বাগান গড়ে ওঠে ওদলাবাড়িতে। তবে তার আগেই আদিবাসীদের দিয়ে জঙ্গল কাটার কাজ চালু করে বৃটিশরা।
গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ভবেন্দ্রনাথ রায় বলেন, বৃটিশ আমলে এই জায়গাটি আসলে স্থানীয় জমিদার মেছুয়া মহম্মদের কামাত ছিল। কামাত শব্দের অর্থ বড় জায়গা। বৃটিশরা তাঁর হাতে জমিদারী তুলে দেয়। ওই সময় ডুয়ার্স ছিল ভূটানের দখলে। বৃটিশরা চুক্তি করে ভূটানের কাছ থেকে ডুয়ার্স অধিগ্রহণ করে। মেছুয়া মহম্মদ এই এলাকার জমিদার। তাঁর জমিতেই বাস করতেন পাগলি বুড়ি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, পাগলি বুড়ির ডাঙ্গা সহ বৃহৎ এলাকা ঘন জঙ্গলে আবৃত ছিল, ঘন বসতিহীন এলাকা ছিল এটি। ঘন জঙ্গলের মাঝে ওই বৃদ্ধার বসত ছিল। নিজেই জঙ্গল সাফ করেছেন। ওই এলাকাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেই থেকেই এলাকার নাম হয়েছে পাগলি বুড়ির ডাঙ্গা। গ্রামের বাসিন্দা তথা ফালাকাটা ব্লকের ধনীরামপুর ১ অঞ্চলের উপ প্রধান সুকুমার রায় বলেন, ঠাকুর্দার কাছে পাগলি বুড়ির গল্প শুনেছি। একসময় এখানে আমাদের বাড়ি সহ তিনটি বাড়ি ছিল। ছিল কৃষিজমি এবং ঘন জঙ্গল। স্বাধীনতার পর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজবংশীরা মেছুয়া মহম্মদের কামাতে এসে বসবাস শুরু করেন। একসময় এখানে কলেরার প্রাদুর্ভাব হয়, সকলে পাগলি বুড়িকে মানত করে সুস্থ হয় বলে শোনা গেছে।
পাগলি বুড়ির ডাঙ্গা এলাকায় সূর্যোদয় সংঘের উদ্যোগে গত ৩৫ বছর ধরে দূর্গা পূজার আয়োজন করা হয়। তবে তার আগে লক্ষীদেবীর পূজা হতো সেখানে। দেবী দশভূজার সাথে শারদীয়া তিথিতে পাগলি বুড়ির পূজাও করা হয়। পাগলি বুড়ির নামে মূর্তি তৈরি করা হয়। পুরোহিত দিয়ে তাঁর পূজা করা হয়। ক্লাবের সম্পাদক দীনেশ চন্দ্র দাস বলেন, আমাদের কাছে পাগলি বুড়ি দেবী। পূর্ব পুরুষদের মুখে শুনেছি তিনি আদিবাসী মহিলা ছিলেন। তাঁর কেউ ছিল না। একাই বাস করতেন এখানে। দূর্গা পূজা করার আগে আমরা পাগলি বুড়ির ও মহাকাল বাবাকে পূজা দিয়ে তুষ্ট করি।