ভান্ডানি দেবীর পূজা আরহ প্রচলিত কাহিনী
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার আর কোচবিহার জেলার বেশ কিছু গ্রাম’ত ভান্ডানি দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই বিষয়ে লেখিসেন হামার চ্যানেলের নিউজ এডিটর ক্ষীরোদা রায়।
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার আর কোচবিহার জেলার বেশ কয়টা গ্রাম’ত ভান্ডানি দেবীর পূজা ঘিরি আনন্দ উৎসব হয়। অনেকে আঞ্চলিক উৎসব বুলি মনে করেন। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার আর আলিপুরদুয়ার জেলার রাজবংশী অধ্যুষিত গ্রামলাতে নয়া করি আর এক উৎসবের আরম্ভ হয়। এই বছর সাইঞ্ঝাতে বিজয়া দশমী তিথি শেষ হবার নগতে একাদশী তিথি আরম্ভ হবার পর থাকি শুরু হইসে ভান্ডানি পূজা। তবে আজি এই মুহুর্তে ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজার, শিলিগুড়ির বগলত শালুগাড়া এমনকি আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা আর কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা সদে বেশ কিছু গ্রামত ভান্ডানি পূজাক ঘিরে চলেছে উৎসবের আনন্দ।
একটা সময় খালি রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানষিয়ে ভান্ডানি পূজাক ঘিরি মাতি উঠিসে, বর্তমানে সেই উৎসব উত্তরবঙ্গের গ্রামাঞ্চলের সোউগ জাতি, সোউগ সম্প্রদায়ের মানষিয়ে অংশগ্রহণ করে।ভান্ডানি দেবী দুর্গার আর একটা রূপ। একাদশী থাকি চাইরদিন ধরি চলে এই উৎসব। আরম্ভ হয় দশমীর দিন ‘যাত্রা পূজা দিয়া।শরতের পর হেমন্ত ঋতুত যাতে চাষ আবাদ ঠিকঠাক হয়, ভাল ফসল মিলে, তার বাদে কৃষিকাজের দরকারি যন্ত্র- পাছুনি, কাছি, ন্যাঙল, জোয়াল, মই, পেন্টি, ছাম, গাহেন ভায় অইন্যান্য যন্ত্রপাতির পূজা করা হয় ‘যাত্রা পূজাত’। আর তার পরের দিন থাকি শুরু হয় ভাণ্ডানী দেবীর পূজা।ভান্ডানিক কাঙো দেবী দুর্গার অইন্য রূপ বুলি মনে করেন, কাঙো কন বনদুর্গা।
উত্তরবঙ্গের ব্যাপক বনাঞ্চলের কোন কোন জাগাত বনবস্তিবাসী ভান্ডানিক বনদুর্গা রূপে পূজা করে।অবশ্য রাজবংশী সমাজত ভান্ডানি ঘিরি একটা লোক কাহিনী আছে। প্রচলিত আছে আছে, দশমীর পর দেবী দুর্গা উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল দিয়া গ্রামের বউয়ের রুপ ধরি বাপের বাড়ি থাকি কৈলাস ফিরিবার সময় রাইতের আন্ধারত ঘাটে হারে ফেলান। গভীর রাইতোত জঙ্গলের ভিতর থাকি মহিলার কান্দিবার শব্দ শুনি ছুটি আইসে বগলের বনবস্তির মানষি। উমুরা সেই রাতিটা নিজের গ্রামত আশ্রয় দেয় ঘাটা হারে ফেলা গ্রামের বোনুষক। একটা রাতি দেবী দুর্গা সেই গ্রামত কাটে ফিরি যান কৈলাস। যাবার আগত দেবী গ্রামবাসীলার আগত নিজের আসল পরিচয় দেন। দেবী কন, গ্রামবাসীলার আদরনী উমাক সন্তুষ্ট করে। উত্তর বাংলার জঙ্গল ভরা গ্রামের মানষির ঘরত সারা বছর ফসলে ভরা থাকিবে এমন আশীর্ব্বাদ দেন দেবী। সেই থাকি দশমীর পর চালু ভান্ডানি পূজা।
উত্তরবঙ্গের ইতিহাস থাকি এই সূত্র মিলে, উত্তরবঙ্গের রাজবংশী মানষির ভান্ডানি দেবীর পুজো চালু হয় কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণের কামরূপ জয়েরও পাঁচশো বছর আগত। সেই সময় দুর্গাপুজোর আয়োজন করির গেইলে রাজাক জানে করিবার রীতি আছিল, রাজা আদেশ দিলে পূজা করা হয়। অনেকের মতে, দুর্গাপুজোর বিকল্প হিসাবে ভান্ডানি পূজা চালু করা হয়। সেই ঐতিহ্য আজিও রাজবংশী মানষি বজায় রাখিসে। দুর্গা বিসর্জনের পর উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজত যে ভান্ডানি পূজা ঘিরি উৎসব সেই দেবী মহিষাসুর মর্দিনী নোহয়, তাঁর রূপ একজন সাধারণ নারীর। দেবী ভান্ডানি দুর্গা হইলেও দ্বিভুজা বা দুই হাত বিশিষ্ট নারী। তার বাহন বাঘ, কারণ বৈকন্ঠপুর জঙ্গল ভরা এলাকা হবার কারণে তিস্তা পারের এই অঞ্চলত একসময় অগুন্তি বাঘ ছিলো। সেই বাদে কথিত আছে দেবী ভান্ডানি বা দুর্গা সিংহের বদলে বাঘের উপর বসি থাকেন। দেবীর সাথত লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ থাকে। কিন্তু এই মূর্তিত অসুরা থাকে না।উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি অঞ্চলের বার্নিশ গ্রাম পঞ্চাইতের ভান্ডারি গ্রামের ভান্ডানি পূজা সবথাকি প্রাচীন। প্রায় পাঁচশো বছর ধরি এই গ্রামত পূজা চলেছে। উত্তরবঙ্গের নানান জাগা থাকি মানষি ভিড় জমায় এই পূজার মেলাত। দুর্গাপুজোর মতো চাইর দিন চলে ভান্ডানি পূজা। পূজাও হয় তন্ত্র মন্ত্র দিয়া।
গবেষকলার মতে, “ভান্ডানিক দেবী দুর্গা কল্পনা করা হইলেও আসলে দেবী ফসল বা শস্যের দেবী। শব্দটার উবজন ভাণ্ডার শব্দ থাকি, যেনঙ- শস্য ভাণ্ডার। সেই হিসাবে দেবী ফসলের ভাণ্ডার রক্ষার দেবী। সেই হিসাবে দেবীর নাম ভান্ডারি। ভান্ডারত ফসল জমা করা হয়। রাজবংশী পুরোহিত বা দেউসি দুধ, দই, চুড়া, চিনি, বাতাসা ফলমূল দিয়া পূজা করেন। কোনটে কামরুপী বামন দিয়া পূজা করা হয়।