বিশিষ্ঠ শিক্ষক সৈকত সরকারের উদ্যোগে টেপরাইয়ে কৃষকদের নিয়ে জৈব সার তৈরির অভিনব পদক্ষেপ

রাহুল দেব বর্মন,দিনহাটা :

মঙ্গলবার সকালে দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের সহেবগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের টেপরাই এলাকায় সংশ্লিষ্ট গ্রামের কৃষকদের নিয়ে এই প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য রাসায়নিক সারের যথেচ্ছ ব্যবহার একদিকে যেমন আমাদের জমিকে নষ্ট করছে, অপরদিকে আমাদের দৈনন্দিন গ্রহন করা খাবারগুলোতেও বিষ মিশে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ফলনের আশায় চাষীরা মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার দরুন মাটির স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার দরুন উর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । বিভিন্ন গবেষণার পর বিজ্ঞানীদের মাটির স্বাস্থ্য নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তার কথা বিভিন্ন জার্নালে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।
এহেন পরিস্থিতিতে কচুরিপানাকে সম্পুর্নভাবে কাজে লাগিয়ে জৈব সার তৈরি করে সবজি উৎপাদনের প্রচেষ্টা শুরু করা হয়েছে। দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের সাহেবগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের টেপরাই গ্রামের স্থানীয় কৃষকদেরকে নিয়ে কচুরিপানা,কলাগাছ, পড়ে থাকা গাছের পাতা ও গোবর দিয়ে উন্নত মানের জৈব সার তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছেন বিশিষ্ঠ শিক্ষক সৈকত সরকার। সমগ্র প্রক্রিয়াটিকে সম্পন্ন করার জন্য তার আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে কোচবিহার কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র।
জৈব সার তৈরীর এই প্রক্রিয়াকরনের বিষয়ের মুল লক্ষ্যই হলো, সাধারণ মানুষ বাজার থেকে যখন বাড়ি ফেরে তখন বাজারের ব্যাগে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সাথে সাথে আরো একটি জিনিস লুকায়িত অবস্থায় নিয়ে আসে,যার নাম বিষ। জমিতে যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করা কীটনাশক বা বিষের একটা অংশ অনায়াসেই প্রবেশ করে সবজি কিংবা ফসলের মধ্যে,যা আমরা আহার হিসেবে গ্রহন করি নিত্যদিন। আমাদের সাথে সাথে ছোটো ছোটো শিশুরাও এই বিষ গ্রহন করছে,যা রীতিমত দুশ্চিন্তার বিষয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি আবশ্যক। তাই স্থানীয় মানুষদেরকে সাথে নিয়ে পাশের নদীর কচুরিপানা, বাড়ির পচনশীল পদার্থ ,কলাগাছ ও গোবরকে পর পর স্তর করে প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার দুটো স্তূপ তৈরী করা হয়। সমগ্র প্রক্রিয়াটির প্রযুক্তিগত তত্ত্বাবধানে ছিলেন কোচবিহার কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ সন্দীপ হেমব্রম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৃষি বিঞ্জানী সামীমা সুলতানা। এদিনের এই প্রশিক্ষণ শিবির নিয়ে সন্দীপবাবু বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটি অভিনব উদ্যোগ, যা কৃষকদেরকে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে বা দূরীভুত করতে সহায়তা করবে। প্রতিদিন পরীক্ষা করা হবে এই স্তুপ গুলোর তাপমাত্রা। খুব কম সময়েই অর্থাৎ একুশ দিন পরেই তৈরী হয়ে যাবে এই জৈব সার। এই সার দিয়েই স্থানীয় কৃষকরা শীতকালীন বিষমুক্ত সবজী চাষ করতে পারবে। খুব কম সময়ে তৈরী হওয়া এই জৈব সারের প্রক্রিয়াকরন দেখতে এলাকার মহিলা,শিশু সহ প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন। বীজ থেকে কিছু সবজির চারা তৈরী করে এদিন মহিলাদের মধ্যে প্রদান করা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ছিল সৃষ্টি প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *