মহারাজ জিতেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর (১৮৮৬-১৯২২)
মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ আর মহারাণী সুনীতি দেবীর মেজ বেটা রাজকুমার জিতেন্দ্র নারায়ণের উব্জন হয় কলকাতার উডল্যান্ডস রাজপ্রাসাদ’ত ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২০শে ডিসেম্বর। ছোট্ট রাজকুমারের আদরের ডাক নাম আছিল প্রিন্স জিৎ।
মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ উমার ছাওয়া-ছোটলার শিক্ষালাভের বিষয়ে খুবে আগ্রাহী ছিলেন। মহারাজকুমারোক পত্থমে দার্জিলিং সেন্ট পল্স স্কুলোত আর পরে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে বড় দাদা মহারাজকুমার রাজ রাজেন্দ্র নারায়ণের সাথতে লন্ডনের ইটন বিদ্যালয়োত ভর্তি করা হয় তারপর ইংল্যান্ড চলি যান। ইয়ার পর উমুরা এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়োত শিক্ষা লাভ করিয়া শ্যাষত দেরাদুনের ইম্পেরিয়াল ক্যাডেট কোরোত সামরিক শিক্ষা লাভ করেন।
মহারাজকুমার জিতেন্দ্র নারায়ণের ঘর চাইর ভাই ছিলেন। বড় ভাই মহারাজা রাজরাজেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর, সেজ ভাই মহারাজকুমার ভিক্টর নিত্যেন্দ্র নারায়ণ আর ছোট ভাই মহারাজকুমার হিতেন্দ্র নারায়ণ। এইলা ছাড়াও মহারাজকুমার জিতেন্দ্র নারায়ণের তিন বোইনিও ছিলো। রাজ কইন্যা সুধীরা, রাজ কইন্যা প্রতিভা আর রাজ কইন্যা সুকৃতি দেবী ।
লন্ডনোত থাকিবার সময়’ত মহারাজকুমার জিতেন্দ্র নারায়ণের বোইনিলার পরিচয় সূত্রে আলাপ হয় বরোদা রাইজ্যের গাইকোয়াড রাজবংশের শিক্ষিতা, হাইস্যমুখী আরহ সুন্দরী রাজকইন্যা ইন্দিরা দেবীর নগতে। আর সেই সূত্র ধরি উমার মইধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈয়ার হয়। দিল্লি দরবারোত উমার এই সম্পর্ক আরো শক্ত হয়। তবে উমার এই সম্পর্ক বরোদারাজ সয়াজীরাও গায়কোয়াড় মানি নিবার পারেন নাই। কুচবিহারের রাজকুমারোক বিয়াও করা নিয়াও নানান সমস্যা দেখা দ্যায়। সইত্য কথা কইতে কি– সেই সমায় পশ্চিমা রীতি অনুযায়ী কইনা পাত্র নিজের পছন্দে বিয়াও সমাজত স্বীকৃত না ছিলো। যাই হউক বহু ঝই-ঝামেলার পর রাজকুমার জিতেন্দ্র নারায়ণ ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট বড়দার রাজকুমারী ইন্দিরা দেবীক বিয়াও করি ফেলান লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেস হোটেলোত। বিয়ার মাত্র ৬দিন (১লা সেপ্টেম্বর )পরেই বড় ভাই মহারাজা রাজ রাজেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুরের নিঃসন্তান অবস্থাত মরণ হইলে কোচ রাজবংশের নিয়ম অনুসারে মৃত মহারাজার ছোট ভাই রাজকুমার জিতেন্দ্র নারায়ণ, রাজবংশের ২০ জনের পর মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর রাজা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে কুচবিহারের রাজসিংহাসনোত বইসেন ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ই সেপ্টেম্বর সকালে। কুচবিহার রাইজ্যের প্রথা অনুসারে নয়া মহারাজার সিংহাসনত বসিবার স্মারক হিসাবে মুদ্রা বা পাইসার প্রকাশ করা হয়। মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণের নামে ১০০টা সোনার পাইসা আর ১০০২ টা রুপার পাইসা তৈয়ারি করা হইসে। পত্থম বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্ব’ত অর্থনীতি ভাঙি পড়ে, মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর সেলা কুচবিহার রাইজ্যের অর্থনীতিক সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করিসেন। যার ফলে রাইজ্যোত কুনো অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দ্যায় নাই।
মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ পিতার স্মৃতির বাদে বহু মহাকুমাত নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হল আর পাঠাগার থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯১৫ সনে উমুরা দিনহাটাত মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ হলের ভিটা থাপন করেন। একই সনে মাথাভাঙ্গাত নৃপেন্দ্র নারায়ণ স্মৃতি ভবনের কাজ আরম্ভ করেন। তুফানগঞ্জ নৃপেন্দ্র নারায়ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুল তৈয়ার হয় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে। মেখলিগঞ্জোত ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে নৃপেন্দ্র নারায়ণ স্মৃতি ভবনের ভিটা থাপন করেন। কুচবিহার শহরোত নৃপেন্দ্র নারায়ণ হোস্টেল ছাত্রাবাস তৈয়ারি করেন একই সমায়ে। এংকরি নানান প্রতিষ্ঠান তৈয়ারি করার সাথে সাথে স্বর্গীয় পিতার স্মরণৎ উমুরা সাগরদিঘির উত্তরপাখে বর্তমান জেলা জজ কোর্টের আগত ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৩রা মার্চ মহারাজা উমার স্বর্গীয় পিতার পূর্ণবয়ব মার্বেল পাথরের একটা সুন্দর মূর্তির ঢাকনা মুকুলন করেন। মূর্তির শিল্পী আছিল ইংল্যান্ডের জে. হোয়াইট হেড।
খেলাধুলার প্রতি মহারাজার খিব প্রেম। নিজে ক্রিকেট, পোলো খেলাত দক্ষ ছিলেন। মহারাজা রাস্তাত গাড়ি নিয়া ঘুরির সমায় ছোটো ছোটো ছাওয়ালাক অঠে নিয়া রাজপ্রাসাদোত নিয়া গেইসেন আর ছাওয়ালার সাথে হাসি, মজা, খেলা, গান করি শ্যাষোত উমাক মিষ্টি খোয়া বাড়ি পহুছিও দিসেন। গানবাজনার প্রতি উমার বিশেষ টান ছিল। রাজবাড়ীত মঞ্চ করি যাত্রা করার ব্যবস্থা করিসেন।মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ আর মহারানী ইন্দিরা দেবী বড় বেটি রাজকইন্যা ইলাদেবী, গাবুর বেটা যুবরাজ জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ, রাজকুমার ইন্দ্র জিতেন্দ্র নারায়ণ, রাজকইন্যা গায়েত্রী দেবী আর রাজকন্যা মেনকা দেবী নামে তিন বেটি আর দুই বেটা ছিলো।মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণের সাহিত্যর প্রতি অনুরাগ ছিল। কুচবিহার রাইজ্যের সাহিত্যচর্চার প্রসার করির বাদে মহারাজা আর মহারানী ইন্দিরা দেবী সাহেবার উৎসাহতে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মহারাজকুমার ভিক্টর নিত্যেন্দ্র নারায়ণের সভাপতিত্বে কুচবিহারে স্বারসত প্রতিষ্ঠান “কুচবিহার সাহিত্য সভা” প্রতিষ্ঠা হয়। কুচবিহারের প্রাচীন সম্পদ উদ্ধার, সংরক্ষণ, প্রকাশ– এইলায় ছিলো প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। এই প্রতিষ্ঠান থাকি প্রকাশিত সাময়িক পত্রিকার নাম ছিল “কুচবিহার সাহিত্যসভা পত্রিকা”। মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণের সাহিত্য ভাবনার প্রতিফলন দেখির পাওয়া যায় দুইখান কবিতাগ্রন্থোত —28th of February -1915 and 4th of may-1917. এইলা ছাড়াও উমুরা Hello Darjeeling -1916 নামে একখান একাঙ্ক নাটক লেখিসেন। উমার আমলে রাইজ্যের প্রধান গ্রন্থাগার স্টেট লাইব্রেরীর অনেক উন্নতিও হইসিলো।
মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর মাত্র ৩৬ বছরিয়া উবজন দিনতে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর নিউমোনিয়াত ভুগী লন্ডনোত অকালে প্রয়াত হন। গোল্ডাস গ্রীনোত মহারাজার শ্যাষ কর্ম পালন করা হয় ২৩শে ডিসেম্বর। মহারাজার উব্জন আর মরণ একে তারিখে। মহারাজার চিতাভস্ম ১৯২৩ সনের ৮ই ফেব্রুয়ারি কুচবিহার শহরোত ধরি আইসা হয়। ১১ই ফেব্রুয়ারি নাবালক মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ক্ষত্রিয় রীতি অনুসারে শ্রাইদ্ধ করেন।