ওয়েব সিরিজের শুটিংয়ের সময় সেবকের বাঘপুলে বিস্ফোরণ, শুটিংয়ের অনুমতি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
নিজস্ব সংবাদদাতা, সেবক, ২৪ মার্চ:
জৈব বৈচিত্র্য রয়েছে সেবকের প্রাকৃতিক পরিবেশে। সেবকে তিস্তা নদীর ওপর বাঘ পুল বা করোনেশন ব্রিজের ওপর একটি ওয়েব সিরিজের শ্যুটিং চলছিল সকাল থেকে। অনেকটা দূরে ক্যামেরা বসিয়ে রাখা হয়। কিন্তু কে জানত যে সেখানে শ্যুট করা হবে বিস্ফোরণের দৃশ্যের?
আচমকা বিস্ফোরণ ঘটলো সেতুর ওপর। শতাব্দী প্রাচীন সেতুর ওপর গাড়ি বিস্ফোরণে স্থানীয়রা ভয় পেয়ে যান। সেবক বাজারের দোকানদার থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা জল নিয়ে ছুটতে যান বিস্ফোরণের ফলে জ্বলতে থাকা গাড়ির দিকে।
পরে জানা গিয়েছে, সেখানে মুম্বাইয়ের একটি ওয়েব সিরিজের নির্মাণকারী সংস্থা শ্যুটিং করছিল। প্রশ্ন উঠেছে, সেখানে বিস্ফোরণের দৃশ্য শ্যুট করার অনুমতি কে দিয়েছে ?
রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানী এলিজাবেথ তখন ইংল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করবেন। রাজা ষষ্ঠ জর্জ এর অভিষেক কালে বাংলার তৎকালীন গভর্ণর জন অ্যান্ডারসন ১৯৩৭ সালে তৎকালীন দার্জিলিং জেলার সেবকে তিস্তা নদীর ওপর করোনেশন ব্রিজ বা বাঘপুলের ভিত্তি স্থাপন করেন। ঐ সময়ে রাজা ষষ্ঠ জর্জের অভিষেক হয়েছিল বলে সেতুর নাম করোনেশন ব্রিজ রাখা হয়। ঐ এলাকা ঘন বনে আবৃত থাকায় সেখানে প্রচুর বাঘ ছিল বলে একে বাঘপুল বলা হয়। রাজবংশী কামতাপুরী শব্দ পুল এর বাংলা প্রতিশব্দ হল সেতু। ১৯৪২ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের লাইফলাইন এই সেতু। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের পর স্বাধীনোত্তর ভারতে সেবকে তিস্তা সেতুর ওপর বিকল্প সেতু নির্মাণের দাবি উঠেছে। কয়েক বছর ধরে আন্দোলনও চলে সেতুর দাবিতে।
এর আগে এই সেতুর ততটা সংস্কার কাজ হয়নি। নেপালের ভূমিকম্পের সময় সেতুর বেশ কিছু জায়গায় ফাটল ধরা পড়ে। ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হওয়ায় মাঝে মধ্যেই মাঝারি মাপের ভূমিকম্প হয়ে থাকে এই এলাকায়। আর তাই সেতুর সংস্কার যেমন জরুরি, তেমনি এর ওপর চাপ কমাতে প্রয়োজন বিকল্প সেতুর। ইতিমধ্যে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই সেতুর ওপর দিয়ে। দূর্বল সেতুর ওপর তবে বিস্ফোরণের দৃশ্য শ্যুট করতে দেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
উত্তরবঙ্গের তরাই ও ডুয়ার্সের মাঝে তিস্তা নদী প্রবাহিত। তিস্তার দুই পারে রয়েছে সবুজ চিরহরিৎ বন। বনের ভেতর রয়েছে জীব বৈচিত্র্য। প্রাকৃতিক পরিবেশের বিঘ্ন ঘটিয়ে কেন এখানে বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে বিস্ফোরণের দৃশ্য শ্যুট করতে দেওয়া হলো। শ্যুটিং করতে পরিবেশ দপ্তর, বন দপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে কিনা সে নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠেছে কারা এখানে শ্যুটিং করার অনুমতি দিয়েছে?