তলবি সভার আগে প্রধানের ইস্তফা ঘিরে ধোঁয়াশা ধনীরামপুরে
নিজস্ব সংবাদদাতা, ফালাকাটাঃ দলের পঞ্চায়েত সদস্যরা বারবার অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়ায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ফালাকাটার ধনীরামপুর ২ অঞ্চলের প্রধান তলবি সভার পূর্বে পদত্যাগ করতে গিয়ে দলের নির্দেশে তিন মাসের ছুটি নিলেন। তবে তার দাবি, শরীর ঠিক না হওয়া অবদি পদে ফিরবেন না। উপ প্রধান তোফাজ্জল হোসেন আপাতত দায়িত্বভার সামলাবেন। এদিকে বিরোধী দল অভিযোগ তুলেছে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত পঞ্চায়েত বোর্ডকে বারবার ভেঙে দিতে গিয়ে একদিকে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটাননো হচ্ছে অপরদিকে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। বিরোধীদের মতে, অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরেও দলের চাপে এতদিন পঞ্চায়েত বোর্ড ভাঙেনি প্রশাসন, প্রধান নিতাই দাসকে না সড়ানোর জন্য দীর্ঘ দুই বছর ধরে বেশ কয়েকবার অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরেও তলবি সভা ডাকেনি প্রশাসন। তবে প্রধানের ইস্তফা ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে ধনীরামপুরে।
ফালাকাটার ধনীরামপুর ২ অঞ্চলের প্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের নিতাই দাসের বিরুদ্ধে দলের ৮ জন পঞ্চায়েত সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। গত মাসে জমা দেওয়া শেষ অনাস্থা প্রস্তাব মতে আগামী ১৩ই এপ্রিল তলবি সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা। তার আগেই প্রধান নিতাই দাস ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে যান। দলের নির্দেশে পদত্যাগপত্র ছুটির আবেদনপত্রে পরিণত হয় বলে খবর। দলের একটি সূত্রে জানা গেছে, তলবি সভায় সংখ্যাগড়িষ্ঠতা দেখাতে পারবেন না ভেবেই তিনি পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। তার পদত্যাগে দলের একটা অংশের আত্মসম্মান জড়িত রয়েছে বলে দল তাকে ছুটির আবেদনপত্র লিখতে বলেন। তিনি তিন মাসের ছুটি চেয়েছেন। তবে নিতাই দাস বলেন, “ইস্তফা দিইনি, যতদিন শরীর সুস্থ না হচ্ছে তিনি পদে ফিরবেন না।” তার বিরুদ্ধে ক্রমাগত অনাস্থা প্রস্তাব জমা হতেই তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন বলে দলের একটা অংশ জানিয়েছে। ফালাকাটার বিডিও সুপ্রতীক মজুমদার বলেন, “এখনও কোন ইস্তফা পত্র আসেনি, তবে শুনেছি তিনি ইস্তফা দিয়েছেন, এখনও ফাইল খুলে দেখা হয়নি। তিনি ইস্তফা দিলে ১৩ তারিখ তলবি সভা হবেনা।” আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, “প্রধান ইস্তফা দেননি, তিনি শারীরিক অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে উপ প্রধান দায়িত্বভার সামলাবেন।”
উল্লেখ্য, দুর্নীতি, স্বজন পোষণ, হুমকি প্রদর্শণ, পঞ্চায়েত সদস্যদের মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো সহ তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সদস্যরা। প্রধান পদ থেকে নিতাই দাসকে সড়ানোর জন্য বারবক অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়ার পরেও প্রশাসন আইনত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তিতিবিরক্ত পঞ্চায়েত সদস্যরা প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে বারবার আবেদন জানাতে থাকেন।
উল্লেখ্য, গত মাসে পার্শ্ববর্তী ধনীরামপুর ১ অঞ্চলে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপির প্রধানের বিরুদ্ধে বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যরা অনাস্থা নিয়ে আসে। অনাস্থা প্রস্তাব জমা হবার পর প্রশাসন দ্রুত তলবি সভা ডাকে। ধনীরামপুর ২ অঞ্চলে দ্রুত তলবি সভা না ডাকায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শেষমেশ তলবি সভার নোটিশ দিয়ে প্রধান নিতাই দাসকে সংখ্যাগড়িষ্ঠতা প্রমাণের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। আগামী ১৩ই এপ্রিল তলবি সভা অনুষ্ঠিত হবে। ফালাকাটা ব্লকের বিধায়ক দিপক বর্মন বলেন, “এগুলো হল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, মুষলপর্ব চলছে। কখন অনাস্থা ডাকবে প্রশাসন জানেনা ওটা বুলু চিক বরাইক ও গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার অঙ্গুলিহেলনে চলছে। এটা অত্যন্ত লজ্জার যে এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির চরম ও চূড়ান্ত অবমাননা। এখানে আইনের শাসন নেই, প্রশাসনের আইন চলে।” তিনি বলেন, প্রশাসন অন্যায় করেছে অনাস্থাকারীদের অনাস্থা সাব্যস্ত করার অধিকার দেয়নি প্রশাসন।”