ঘুরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের বিরোধিতা করলেন গ্ৰেটার নেতা তথা রাজবংশী ভাষা একাডেমীর চেয়ারম্যান বংশীবদন

নিউজ ডেস্ক, জলপাইগুড়ি: সোমবার বিকেলে নাগরাকাটার আংরাভাসায় একটি কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি।
সেখানে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, পৃথক রাজ্যের বিরোধিতা করে গত ১২ ই জুলাই ধূপগুড়িতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ বলে কিছু নেই। গোটাটাই বাংলা।

এই বিষয়ে আপনার কি মত, এবিষয়ে দি গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন (জি সি পি এ) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক বংশীবদন বর্মন বলেন, “এই এবিষয়টা অনেকটা ব্যাক্তিগত ব্যাপার, কেউ যদি বলে এটা করতে দেব না, ওটা করতে দেব না । আবেগপ্রবণ হয়ে মানুষ অনেক কিছু বলে, আবেগের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই।বাস্তব টা খুবই কঠিন “

‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন উত্তরবঙ্গ কথাটা শুনতে ভালো লাগে না’

এবিষয়ে তিনি বলেন,” ওনার ভালো লাগা না লাগা সেটা ওনার ব্যাপার , সেক্ষেত্রে উনি আবেগে কি বলেছেন। সেটা উনি ভালো জানেন। এব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। উত্তরবঙ্গ কথাটা চলে আসছে কয়েক যুগ আগে থেকে সেই ভিত্তিতে উত্তরবঙ্গ বলা। ভারতীয় সংবিধানে কোচবিহার এখনও গ শ্রেণীর রাজ্য। যা চুক্তিতে রয়েছে সেটাই আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্য। তার নাম কে কি দিলো, সেটা বিষয় নয়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, এর নাম গ্ৰেটার কুচবিহার। গ্রেটার কোচবিহার রাজ্য নতুন কোন দাবি নয়। উত্তরবঙ্গ, বিহারের পূর্ণিয়া জেলা, অবিভক্ত গোয়ালপাড়া নিয়েই গ্রেটার কোচবিহার। ওই চুক্তি হয়েছিলো কোচবিহারের মহারাজার সাথে ভারত সরকারের। সেই মোতাবেক বৃহত্তর কোচবিহারের মানুষের অধিকার সুরক্ষিত রাখার কথা ভারত সরকার।”

তবে কি আপনি অভিষেকের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে করছেন, এবিষয়ে তিনি বলেন,”এখানে বিরোধীতার কিছু নেই। আগে ছিল কোচবিহার স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন, এখন সেটার নাম উত্তরবঙ্গ স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন। তাহলে তো আগে উত্তরবঙ্গ পরিবহন সংস্থা তুলে দিতে হবে। এটা সরকারি সংস্থা। এটা তুলুক আগে। আবেগপ্রবণ হয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলেন। আবেগ আর বাস্তব অনেক আলাদা। বাস্তব বড়ো কঠিন। আবেগের বশে অনেক মুণি অনেক কথা বলেন। এই কথাটা এখানকার মানুষ কিভাবে নিবে না নিবে সেটা এখানকার মানুষের ব্যাপার। বলা অনেক কিছু যায়, কিন্তু করা কঠিন। আবেগের কথায় গুরুত্ব না দেওয়াই ভালো বলে আমি মনে করি।”
তিনি আরো বলেন,”কোচবিহার মহারাজার সাথে ভারত সরকারের চুক্তির বিষয়ে আমাদের দাবি। এবিষয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি বলল না বলল সেটা বিষয় নয়।”

উল্লেখ্য প্রতিবছর ১৮ জুলাইয়ের দিনটিতে জিসিপিএ-র পক্ষ থেকে গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়। ১৯৪৭ সালের এই দিনেই ব্রিটিশ সরকার বৃহত্তর কোচবিহারের সমস্ত এলাকা কোচবিহারের মহারাজার কাছে লিখিতভাবে ফিরিয়ে দেয় । এদিন আংরাভাসা বোর্ড ফ্রি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের পর নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটিকে উদযাপন করা হয়। তুলে ধরা হয় ঐতিহ্যশালী রাজবংশী কৃষ্টি সংস্কৃতিকে। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন জিসিপিএ-র কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক গিরিজা শংকর রায়, জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সভাপতি মোহন রায় প্রামাণিক, জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ রায় প্রমুখ।

উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ ই জুলাই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাক্টের অধীনে ব্রিটিশ সরকার ১৭৭৩ সন থেকে ১৯০২ সন পর্যন্ত দক্ষিন দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, জপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং অবিভক্ত অসমের গোয়ালপরিয়া জেলা অধিগ্রহণ করে রাখে। পরে ১৯৪৭ সালের ১৮ ই জুলাই ব্রিটিশ সরকার মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ন ভুপ বাহাদুরের কাছে লিখিতভাবে এই সমস্ত এলাকা ফিরিয়ে দেন। সেইদিন থেকেই কোচবিহার সার্বভৌমত্ব লাভ করে। তারপর থেকে এই দিনটি পালন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *