সদ্যজাতের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী পুলিশ?

ফালাকাটাঃ পুলিশের হেনস্তা এবং অমানবিক আচরণের ফলে সময়মত শিশুর চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যু হয়েছে সদ্যজাতের, কোচবিহার কোতয়ালী থানার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল ফালাকাটার জটেশ্বরে। জটেশ্বরের ঘোষ দস্তিদার পরিবারের সদস্য ডঃ সন্দীপন ঘোষ দস্তিদার এবং তার ভাই তথা মৃত শিশুর বাবা শিবাজী ঘোষ দস্তিদার সহ গাড়ির চালক দেবাশীষ রায়ের উপর পুলিশ হেনস্তা করে বলে অভিযোগ।

অভিযোগ, জটেশ্বরের ঘোষ দস্তিদার পরিবারের সদস্য শিবাজী ঘোষ দস্তিদার ও পিংকি ঘোষ দস্তিদারের সদ্যজাত সন্তান গত ২রা অক্টোবর গুরুতর অসুস্থ হলে প্রথমে ফালাকাটা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করান তারা। সেখানে চিকিৎসায় উন্নতি না হলে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য ফালাকাটা থেকে কোচবিহারে রেফার করে দেওয়া হয়। ওইদিন রাতে কোচবিহার মাতৃমা শিশুবিভাগে ভর্তি করানো হয় সদ্যজাতকে শিশুটিকে। চিকিৎসায় কিছুটা সারা দিলে শিশুটির বাবা শিবাজী ঘোষ দস্তিদার ও জেঠু ডঃ সন্দীপন ঘোষ দস্তিদার গাড়িতে করে জটেশ্বরের বাড়িতে ফিরে আসেন। কিন্তু রাত ২টো নাগাদ শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে মাতৃমা শিশু বিভাগ থেকে তাদের কাছে ফোন আসে। রাতেই গাড়ির চালক দেবাশীষ রায়কে সঙ্গে নিয়ে দুই ভাই কোচবিহারের দিকে রওনা হন। অভিযোগকারী সন্দীপন ঘোষ দস্তিদার বলেন, আমরা যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি যাবার চেষ্টা করি। সাড়ে তিনটা নাগাদ কোচবিহারের কাছাড়ি মোড়ে এলে একটি গাড়ি আমাদের গাড়ির কাছ দিয়ে ঘেঁষে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আমাদের চালক দেবাশীষ রায় দ্রুত ব্রেক কষেন। এরপর আমাদের দাঁড় করিয়ে মারধর করা হয়, দেবাশীষের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। বারবার তাদেরকে আমরা আমাদের অসুস্থ শিশুর সংকটজনক অবস্থার কথা বললেও তারা কানে নেয়নি কথা। উল্টে আমাদের নামে গাঁজা পাচারের মিথ্যে কেস দেওয়ার হুমকি দেয়। কেড়ে নেওয়া হয় গাড়ির কাগজ, প্রেসক্রিপশন, এমনকি নগদ টাকা।

অভিযোগ, পুলিশের ওই টহলদারি গাড়িতে টাউন দারোগা এস. দাস এবং মিঠুন বিশ্বাস নামের এক পুলিশকর্মী ছিলেন। মিঠুন বিশ্বাস শিবাজী ঘোষ দস্তিদারকে মারধর করেন। এরপর আটক করা হয় তিনজনকে। থানায় নিয়ে এসে লক আপে ভরে মারধর করা হয় তাদের। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেতে তাদের মুচলেকা দিতে হয়। সন্দীপন ঘোষ দস্তিদার বলেন, ভাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছি। পুলিশের মারে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। তিনদিন কোথাও যেতে পারিনি। গত ৭ তারিখ আমাদের পরিবারের নতুন সদস্যের জীবনের শেষ প্রাণবায়ু প্রাণ থেকে বেরিয়ে যায়।

উল্লেখ্য যে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ঘোষ দস্তিদার পরিবার। জটেশ্বরে লীলাবতী মহাবিদ্যালয় গড়ে তুলতে তারা জমি দান করেন। পুলিশকে একথা বললেও বিশ্বাস করেনি টহলরত পুলিশ। এমনকি সদ্যজাত শিশুটি মাতৃমা সদনে ভর্তি রয়েছে কিনা তার খোঁজ খবর নেয় কোতয়ালী থানার পুলিশ। তবে তারপরেও ছাড়তে রাজি হয়নি পুলিশ। পুলিশের দাবি মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন শিশুর পিতা শিবাজী বাবু। গাড়ির চালক দেবাশীষ রায় এবং সন্দীপন ঘোষ দস্তিদার মদ্যপান করেননি। ঘোষ দস্তিদার পরিবারের সদস্যরা জানান, দেবাশীষ ও সন্দীপন মদ খান না। সন্তানের অসুস্থতার জ্বালায় শিবাজী মদ্যপান করে থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *