রায় পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজো

অপু দেবনাথ , হলদিবাড়ি:বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। কালী পুজো, ভাইফোঁটার পরে সকলে অপেক্ষায় থাকেন বাঙালির আরও এক বড় উৎসব- জগদ্ধাত্রী পুজোর । পার্বতীরই অপর রূপ দেবী জগদ্ধাত্রী । জগতের ধাত্রী অর্থাৎ ধারণ কর্ত্রী। উপনিষদে জগদ্ধাত্রীর নাম উমা হৈমবতী বলে উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণ গ্রন্থেও তার উল্লেখ পাওয়া যায়।

হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় মানসে রাজসিক দেবী দুর্গা (পার্বতী) ও তামসিক কালীর পরেই স্থান সত্ত্বগুণের দেবী জগদ্ধাত্রীর । উপনিষদ অনুযায়ী, দেবাসুরের যুদ্ধে দেবতাদের জয়ের পর, তারা অহংকারী হয়ে ওঠেন । তাঁদর অহং, নিবৃত্তির জন্যই আবির্ভূত হন ত্রিনয়নী দেবী জগদ্ধাত্রী । চতুর্ভুজা এই দেবীর চার হাতে থাকে , শঙ্খ , চক্র, ধনুক ও বাণ । দেবীর দুর্গার মতো জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ, যা করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান।
কার্তিক মাসের শুক্ল নবমীতে হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। দুই প্রথায় এই পুজো করার প্রচলন আছে । কেউ দুর্গাপূজার ধাঁচে পুজো করেন সপ্তমী থেকে নবমী, আবার অনেকে নবমীর দিনই তিনবার পুজোর আয়োজন করেন । এই পুজোর অনেক প্রথাই দুর্গাপুজোর অনুরূপ । প্রাচীন ঐতিহ্য হলদিবাড়ি শহরের রায় পরিবারের দেবী জগদ্ধাত্রী পুজো আজও নিয়ম নিষ্ঠার সাথে পূজিত হয় । দেশভাগের সময় পূর্বপুরুষের সম্পত্তির ভাগাভাগি হয়েছে । তখন থেকেই দেবী জগদ্ধাত্রী পূজিত হন রায় পরিবারের হাতে । পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য মেনে দীর্ঘদিন ধরে এইভাবেই দেবীর আরাধনা করছে হলদিবাড়ির এই পরিবার । তবে রায় পরিবারের যেই পুজোর আয়োজন করুক না কেন , বাকি সবাই তাতে অংশগ্রহণ করেন।

রায় পরিবারের এবার পুজো ৭৬ তম বর্ষে পড়েছে । পুরনো এই পুজোর বৈশিষ্ট্য হল নবমীর দিনই তিনবার পুজোর আয়োজন করেন । রায় পরিবারের সদস্য অসিত কুমার রায়ের কথায় উঠে এল পুজোর ইতিহাস । তিনি বলছিলেন , আমাদের পরিবারের এই পুজো শুরু হয় অবিভক্ত বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন আমার প্রপিতামহ অতুল চন্দ্র রায় , মনোরঞ্জন রায় , চিত্তরঞ্জন রায় । তবে দেশভাগের পর সীমান্ত পেরিয়ে পাকাপাকিভাবে ভারতে চলে আসেন পরিবারের সদস্যরা । অতুল চন্দ্র রায় , মনোরঞ্জন রায় , হলদিবাড়ি শহরের পূর্বপাড়ায় বসবাস শুরু করেন । তারপর থেকে হলদিবাড়ি শহরের পূর্বপাড়াতে নিয়ম নিষ্ঠার সাথে পুজো করে আসছেন । পরিবারের সদস্যরা এই দিন জানান পুজো কে কেন্দ্র করে পরিবারের সব সদস্য একত্রিত হন । সমস্ত আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে আড্ডায় জমজমাট হয়ে উঠে রায় পরিবারের বাড়ির প্রাঙ্গণ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *