হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে তৃতীয় হয়েছে মালদার মহম্মদ মুকতাদুর রহমান৷
মালদা:- মুকতাদুর রহমানের সাফল্যে উজ্জীবিত কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের কুশাবাড়ি গ্রাম৷ উল্লসিত ফতেখানি বিএমএস হাই মাদ্রাসা৷ মুকতাদুরের বাবা মহম্মদ সাহাদাত হোসেন একসময় দিনমজুরি করতেন৷ এখন গ্রামে গ্রামে পেঁয়াজ-রসুন ফেরি করেন৷ নিজে শিক্ষিত নন৷ কিন্তু চার ছেলেমেয়ে যাতে শিক্ষিত হতে পারে তার জন্য চেষ্টার কসুর করেননি তিনি৷ আধপেটা খেয়েও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ বড় মেয়ে স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন৷ তারপরেই মুকতাদুর৷ দ্বিতীয় ছেলে অষ্টম আর ছোট মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে৷ ছেলের সাফল্যে এই মুহূর্তে তাঁর বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের ভিড়৷ তাঁর স্ত্রী সাবিনা খাতুন জানালেন, “খুব কষ্টে সংসার চলে আমাদের৷ ছেলেটাও খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে৷ খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করত৷ আজ তারই ফল পেল৷ আমি খুব খুশি৷
ছাত্রের সাফল্যে গর্বিত মাদ্রাসার শিক্ষিকা রুণা লায়লা এবং শম্ভু চৌধুরী৷ রুণাদেবী জানান, “আমরা আশা করেছিলাম, মুকতাদুর পরীক্ষায় ভালো ফল করবে৷ কিন্তু সে যে এতটা ভালো ফল করবে, সেটা ভাবিনি৷ ওর জন্য আমরা গর্বিত৷ ওর ভবিষ্যতের সাফল্য কামনা করছি৷ স্কুলের তরফে যতটা পারা যায়, আমরা তাকে সাহায্য করেছি৷ তবে মুকতাদুরের একটা বিশেষত্ব রয়েছে৷ ও সেলফ মোটিভেটেড৷ এটাই ওকে লড়াই করার প্রেরণা জুগিয়েছে৷” একই বক্তব্য শম্ভুবাবুরও৷ তিনি বলেন, “মুকতাদুর প্রথম থেকেই মেধাবী৷ আমরা শিক্ষকরা সবাই ওকে শুধু ঘষামাজা করেছি৷ যখন যা চেয়েছে, আমরা তাকে সব দেওয়ার চেষ্টা করেছি৷ আমি ভেবেছিলাম ও প্রথম দশে থাকতে পারে৷ কিন্তু সে যে তৃতীয় হবে, সেটা ভাবিনি৷”
কুশাবাড়ি গ্রামের মহম্মদ তাসলিম আলি বলছেন, “মুকতাদুরের ফলাফলে আমরা প্রচণ্ড খুশি৷ ও খুব গরিব পরিবারের ছেলে৷ এমন একটি পরিবারে থেকে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে ও যে ফল করেছে, তা এলাকায় উদাহরণ হয়ে থাকবে৷ অর্থের অভাবে ছেলেটি কোনও মিশন কিংবা বড় প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি৷ বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করেছে৷ গ্রামের একটি টিউশন সেন্টারে কোচিং নিয়েছে৷ আমাদের গ্রামে এর আগে এমন সাফল্য কেউ আনতে পারেনি৷”
এবারের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় ৮০০ নম্বরের মধ্যে ৭৭৪ পেয়েছে মুকতাদুর৷ তার প্রাপ্ত মান বাংলায় ৯৮, ইংরেজিতে ৯২, অংকে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৫, ভূগোলে ৯৫, ইসলাম পরিচয়ে ৯৭ এবং দুই ঐচ্ছিক বিষয়ের মধ্যে আরবিতে ৯৭ এবং ওয়ার্ক-ফিজিক্যাল এডুকেশনে ৯৫৷ তার বক্তব্য, “গরিবির সঙ্গে লড়াই করেই পড়াশোনা করেছি৷ স্কুলের শিক্ষকরা, বিশেষ করে অংকের শিক্ষক আমাকে ভীষণ সাহায্য করেছেন৷ বাড়ি থেকেও ভালো সাপোর্ট পেয়েছি৷ বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই আমার লক্ষ্য৷ হাই মাদ্রাসার ফলে আমি খুব খুশি৷