প্রয়াত হলেন উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট মেচেনি শিল্পী বুধেশ্বরী রায়
প্রয়াত হলেন উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট মেচেনি শিল্পী বুধেশ্বরী রায়
বাপ্পা রায়, ময়নাগুড়ি, ৪ ডিসেম্বর : ফের উত্তরবঙ্গের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটল। শিল্পী মহলে শোকের ছায়া। উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত এবং সুনাম ধন্য মেচেনি শিল্পী বুধেশ্বরী রায় বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯ টা নাগাদ নিজের বাড়ি ময়নাগুড়ি ব্লকের খাগড়াবাড়ি দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের সুরি পাড়য় প্রয়াত হন। মৃত্যু কালে তার বয়স আনুমানিক ১১২ বছর। তার এই প্রয়াণে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শিল্পী মহল। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে বাড়ি থেকে টেকাটুলি যাওয়ার পথে রাস্তায় পড়ে যান। তারপর থেকেই বিছানায় শয্যাশায়ী বুধেশ্বরী দেবী। বুধবার আচমকাই সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন শিল্পী মহল তাদের বাড়িতে আসেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। এই বিষয়ে বুধেশ্বরী রায়ের বড় নাতি শৈলেন রায় বলেন, " কিছুদিন আগে টেকাটুলি যাওয়ার পথে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে বাড়িতে অসুস্থ ছিলেন। আজ সকালে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।" শিল্পীর এই প্রয়াণে মর্মাহত গোটা শিল্পী মহল। এই বিষয়ে ময়নাগুড়ি ১ নং ব্লক লোক প্রসার শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি পবিত্র সরকার বলেন, " এই ধরনের একজন বড় মাপের মেচেনি শিল্পীর প্রয়াণে আমরা গভীর ভাবে মর্মাহত। শিল্পীর আত্মার শান্তি কামনা করছি।"
উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের লোক শিল্পীর মধ্যে অন্যতম প্রথম সারির একজন শিল্পী হলেন বুধেশ্বরী রায়। তার বাড়ি ময়নাগুড়ি ব্লকের খাগড়াবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুরি পাড়া গ্রামে। ছোট থেকেই পরিবারের বংশ পরম্পরা গত ভাবে চলে আসা এই মেচেনি গান করতেন। তাদের দলে ঘুরতেন। আর নিয়মের স্রোতে তার কাঁধে এসে পড়েছে দায় ভার। ছোট থেকে এই গান চর্চার সাথে থাকায় তিনি অনেক কাছে থেকে এই গান এবং নাচ জানতেন। মূলত তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে পূজিত হয় তিস্তা বুড়ি। আর সেই পূজাকে কেন্দ্র করে যে গান গাওয়া হয় তা হল মেচেনি গান। সেই গান গেয়ে বুধেশ্বরী রায় খ্যাতি অর্জন করেছেন। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে শংসাপত্র পেয়েছিলেন তিনি। বুধেশ্বরী দেবীকে ২০২৩ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের পক্ষ থেকে ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা পুরস্কারের সম্মানিত করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে সম্মাননা অর্জন করেছিলেন তিনি। নিজের ঘরে আজও জ্বলজ্বল করছে সেই সম্মান গুলি। আজ থেকে তিনি নেই কিন্তু তার সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে মেচেনি গান নিয়ে তার অবদান এবং তার শিল্পী সত্ত্বার কথা।