থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত মেয়েকে চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আর্জি

নিজস্ব প্রতিবেদক, কোচবিহার: কোচবিহার-২ ব্লকের খাগড়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম খাগড়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ভীম চন্দ্র দাস ও অর্চনা দাসের সাড়ে ছয় বছরের শিশুকন্যা প্রতিমা দাস জন্মের পর থেকেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। আর পাঁচজন অন‍্য শিশুর মতো শারীরিক বিকাশে এবং খেলাধুলায় অক্ষম প্রতিমা। এমনকি বাবা-মায়ের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিবর্তে মাঝে মধ্যেই তাকে ছুটতে হয় হাসপাতালে। জানা গেছে জন্মের কিছুদিন পর থেকে তাঁর থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। তখন থেকেই প্রতি মাসে একবার করে তাঁকে রক্ত দিতে হয়। এতদিন হাঁটাচলা, খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক থাকলেও বিগত ছয় মাস ধরে তাঁর শারিরীক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। দিনদিন হাত-পা শীর্ণকায়, পেট স্থূলকায় এবং শরীর ফ্যাঁকাশে হতে থাকে। এখন তাঁকে প্রতি মাসে ২-৩ বার রক্ত দিতে হচ্ছে। এই অবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এই অসহায় দম্পতি। চরম আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থায় কোনোরকমে সংসার চলে তাদের। শিশুটির মা অর্চনাদেবী বলেন, শিশুর চিকিৎসার জন্য একাধিকবার কোচবিহার সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার ডাক্তার উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দেখানোর পরামর্শ দেন। সেইমতো আমরা সেখানে নিয়ে যাই। সেখানকার ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখার পর কিছু ওষুধপত্র দিয়ে পুনরায় কিছুদিন পরে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু অসুস্থ মেয়েকে বারবার শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল। তাছাড়া সেখানে থাকা খাওয়াও অনেকটা ব্যয়বহুল। যা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই শেষমেশ কোচবিহারে এক জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জেনকে দেখানো হলে তিনি অবিলম্বে তাঁর পেটে জটিল অস্ত্রপচার করার কথা বলেন। কিন্তু যার জন্য মোটা অংকের টাকার প্রয়োজন। প্রতিমার বাবা ভীম চন্দ্র দাস পেশায় দিনমজুর এবং মা অর্চনা দাস গৃহবধূ। তাদের সংসারে প্রতিমা ছাড়াও অপর একটি ১২ বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থায় কি করে মেয়ের চিকিৎসার এতবড়ো ঝুঁকি নেবেন, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁরা আরও জানান শারীরিক সমস‍্যার কারণে খেতে ও ঘুমোতে পারছে না প্রতিমা। এতদিন হাঁটাচলা করতে পারলেও এখন খুব কষ্ট হয়। সবসময় কোলে নিয়ে থাকতে হয়। পোশাকও পড়তে ভীষণ অসুবিধা হয়। তাঁকে নিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়েছি আমরা। একদিকে লকডাউন চলছে, তার জন্য কাজকর্ম সব বন্ধ। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ওপরেই মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে মাথায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। প্রতিমার বয়স এখন সাড়ে ছয়। সে স্থানীয় রমেশ রায় স্মৃতি শিক্ষা কেন্দ্রে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। অন‍্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে না পারলেও বিদ্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত করত সে। কিন্তু বছরখানেক ধরে তাঁর শারীরিক সমস‍্যা বাড়ার ফলে বিদ্যালয় যেতে পারছে না। তাই অবিলম্বে তার অপারেশনের প্রয়োজন। সংসারে অভাবের তাড়নায় চিকিৎসার জন্য কোনোরকম উদ‍্যোগ নিতে পারছেন না তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দারা ও প্রতিমার বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারাও চান সে দ্রুত অন‍্য শিশুদের মতো সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠুক। প্রতিমাকে অন‍্য শিশুদের মতো সুস্থ ও স্বাভাবিক করে তুলতে চান তার বাবা-মা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসার খরচ জোগাতে চিন্তিত অসহায় এই দম্পতি। তাই কোনো সহৃদয় ব্যক্তি, বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *