সংবর্ধনা মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কথা বললেন পার্থ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কোচবিহার : একুশের বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে করোনা আবহের মধ্যেই বেশকিছুদিন ধরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক নানা কর্মসূচি ও পালাবদল। কিছুদিন আগেই কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা সভাপতির দায়িত্বভার দেওয়া হয় পার্থপ্রতিম রায়ের কাঁধে। তারপর থেকেই জেলার একাধিক জায়গায় দলীয় নেতাকর্মীরা নতুন সভাপতিকে সংবর্ধনা জানাতে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেন। দলের একাংশ মনে করছে পার্থকে জেলা সভাপতি করে যেন অক্সিজেন পেয়েছে দল। যদিও কোথাও কোথাও তা নিয়ে বিতর্ক চলছেই। আবার গোষ্ঠী কোন্দলের বিষয়টিও যেনো পিছু ছাড়ছে না বলে বিরোধীদের দাবি।

শনিবার কোচবিহার-২ ব্লকের আমবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়াইবাড়ি নরনাথ হাইস্কুল প্রাঙ্গণে কোচবিহার-২ ব্লক কিষাণ ক্ষেত মজদুর সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং কর্মীসভার মঞ্চে অন্যরা উপস্থিত থাকলেও প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য পরিমল বর্মনকে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। তিনি ছাড়াও অপর আরেক জেলা পরিষদ সদস্য বরুণ কুমার দত্তও উপস্থিত ছিলেন না। এর আগে দল দু’জনকেই উত্তর বিধানসভার যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব দিয়েছিল। তারা দুজনেই প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। এর আগের বিধানসভা ভোটে পরিমল বাবু উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের বিধায়ক পদপ্রার্থী ছিলেন। এর আগেও পার্থপ্রতিম রায়ের একাধিক কর্মসূচিতেও তাদের দেখা যায়নি। এ নিয়ে দলের অন্দরেই বিরোধের প্রশ্ন উঠছে বারবার। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর একবারও উত্তর বিধানসভা তাদের দখলে নিতে পারেনি। প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি একুশের বিধানসভায় কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে বৈতরণী পার করতে পারবে তৃণমূল ? বিধায়কের প্রার্থীপদ নিয়েও দলের অন্দরে ইতিমধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যেহেতু কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে দলের বিধায়ক না থাকার কারণে কিছুদিন আগেও দলের রাজ্য নেতৃত্ব পার্থপ্রতিম রায়কে সেই বিধানসভার সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করার দায়ভার তুলে দেয়। তারপর থেকেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে পার্থ প্রতিম রায়কে প্রার্থী করা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। যদিও পার্থপ্রতিম রায় জানান দল কাকে প্রার্থী করবে আর কাকে করবে না, তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আসন্ন বিধানসভায় কোচবিহার জেলার নয়টি কেন্দ্রের প্রত্যেকটিই যেন তৃণমূল কংগ্রেস দখল করতে পারে আমরা সেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। দলে কোনোরকম গোষ্ঠী কোন্দল নেই। আপাতত কোচবিহার-২ ব্লকে কোনো কার্যকরী কমিটি নেই। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন করে ব্লক সভাপতি ঘোষিত হবে। দলের কাজে অনেকের অনেক জায়গায় প্রোগ্রাম থাকে তাই সবাই উপস্থিত হতে পারেনি। তবে সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এদিনের সংবর্ধনা মঞ্চে রাজবংশী ভাষায় বক্তব্য রাখেন তিনি। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কথা বলেন। এছাড়াও বসে যাওয়া নেতা তরুণ রায়, পরিমল রায় এবং সরেন রায়কে দলকে চাঙ্গা করার কথা বলেন। তিনি বলেন অনেক বসে যাওয়া নেতাকে আমরা তুলে এনে দলের কার্যভার দিয়েছি। তারা অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে দলের কাজ করে যাচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারকে কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে কমপক্ষে ২৫ হাজার ভোটে তৃণমূল জয়লাভ করবে বলে তিনি দাবি করেন। কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের একাধিক নীতির বিরোধিতা করেন এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরেছেন। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিকী আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন তিনি।
অনুষ্ঠান শেষে আমবাড়ি অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বুথের শতাধিক বিজেপি ছেড়ে আসা কর্মীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন তিনি। এদিনের অনুষ্ঠানে কোচবিহার-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপাল সরকার, সহ-সভাপতি রাধারানী রায় বর্মন, দলের আমবাড়ি অঞ্চল সভাপতি সুব্রত দেব, আমবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান করুনা কান্ত রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *