বীর যোদ্ধা, সফল কূটনীতিবিদ কামরূপ-কামতা রাইজ্যের যুবরাজ শুক্লধ্বজ বা চিলা রায়
ক্ষীরোদা রায়: বিশ্বের সেরা চাইর বীর যোদ্ধার মইধ্যে একজন শুক্লধ্বজ বা চিলা রায়। মাঘী পূর্ণিমার পবিত্র তিথিত ৫১১ বছর আগত উমার উবজন কামরূপ কামতার পবিত্র ভূঁঈয়োত।
কামতেশ্বর বিশ্বসিংহের মৃত্যুর পর রাজা হন তার বড় বেটা নরসিংহ নিজেকে রাজা ঘোষণা করেন। যদিও বিশ্বসিংহ উমার এগারো জন বেটার ভবিষ্যৎ কর্ম ঠিক করি দিসেন, সেই অনুযায়ী বিশ্বসিংহের মৃত্যুর পর রাজা হবার কথা নরনারায়ণ বা মল্লদেবের। ঐ সময় নরনারায়ণ আর শুক্লধ্বজ বারাণসীর ব্রহ্মানন্দ বিশারদ নামে এক সন্ন্যাসীর আশ্রমত থাকিয়া সংস্কৃত ভাষাত ব্যকরণ, সাহিত্য, শ্রুতি, পুরাণ, জ্যোতিষ বিদ্যা নিয়া পড়াশুনা আরম্ভ করে। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে দুইভাই বাড়ি ফিরি আসিলে নরসিংহের হাত থাকি দেশ শাসনের অধিকার গ্রহণ করে। কামতা কামরুপ রাইজ্যের নয়া রাজা হন মল্লদেব বা নরনারায়ণ আর সেনাপতি হন শুক্লধ্বজ বা চিলা রায়। মহারাজ নরনারায়ণের ছোট ভাই শুক্লধ্বজ কোচবিহার রাইজ্যের প্রধ্যান সেনাপতির পদ পান।
সেনাপতি শুক্লধ্বজ মহারাজ নরনারায়ণের ডাইন হাত বুলি পরিচিন আছিল। শুক্লধ্বজ’ক যুবরাজ হিসাবে উল্লেখ করা হইসে। উমাক দেওয়া হয় সংগ্রাম সিংহ উপাধি। রাজ সিংহের বুরুঞ্জিত উল্লেখ আছে যে, গৌড় আক্রমণ করির যায়া যে বীরত্ব দেখাইসেন শুক্লধ্বজ তার বাদে উমাক সংগ্রাম সিংহ উপাধি দেওয়া হয়। উল্লেখ আছে সেনাপতি শুক্লধ্বজ ভরলা নদী পার হইসেন ঘোরার পিঠিত ঝাঁপ দিয়া চড়ি। চিলার মতন করি ঝাঁপ দিয়া ঘোরার পিঠিত নদী পার হওয়ার ঘটনা থাকি শুক্লধ্বজ চিলা রায় উপাধি পান। এমনকি যুদ্ধের সময় চিলার মতন ছোঁ মারি চখা তরোয়াল দিয়া শত্রপক্ষের সৈন্যক হেরে দিসে চিলা রায়। শুক্লধ্বজ এক বীর যোদ্ধা, একজন দক্ষ কূটনীতিক। কোন সময় তরোয়ালের জোরে আরহ কোন সময় সফল কূটনীতির প্রয়োগ ঘটেয়া একটার পর একটা রাইজ্য জয় করির ধরিসিলেন শুক্লধ্বজ। ঐতিহাসিক টয়েনবি বিশ্বের সেরা চাইর যোদ্ধার মইধ্যে শুক্লধ্বজ’ক অইন্যতম শ্রেষ্ঠ বুলি বর্ণনা করিসেন।
দাদা মহারাজা আর ছোট ভাই সেনাপতি, কোচবিহারের বিজয় রথ সেলা চাইরো পাখে ছড়ি পড়েছে। আকবরনামা অনুসারে কোচ রাইজ্যের সীমানা উত্তর পাখে তিব্বত, দখিনে ঝোড়াঘাট আর আসাম পর্বতমালা আর পছিমত ত্রিহুত বা মিথিলা অবদি আছিল।
খান আমানুতুল্লাহ চৌধুরী তাঁর ইতিহাস বইয়োত উল্লেখ করিসেন, মহারাজা নরনারায়ণের আদেশ পায়া শুক্লধ্বজ জয়ন্তিয়া, কাছার, মণিপুর, ত্রিপুরা আক্রমণ করি জয়লাভ করি ফিরি আইসে। শুক্লধ্বজ গৌড় আক্রমণ করিলে পরাজিত হন, কূটনীতিক চাল চালি পাঁচটা পরগনা উপহার হিসাবে পান গৌড়ের রাজমাতার কাছ থাকি। এমনকি গৌড়ের রাজ কইন্যার সাথে বিয়াওঅ হয় শুক্লধ্বজের।
নরনারায়ণ এত বড়ো রাইজ্য একেলায় ভোগ করে নাই। বড়ো দাদা নরসিংহ আর ছোট ভাই শুক্লধ্বজ এর হাত’ত রাইজ্যের বেশ কিছু অংশের দায়িত্ব তুলি দেন। কামরূপ সোদে আসাম অঞ্চলের শাসনকাজ ছোট ভাই শুক্লধ্বজের হাত’ত তুলি দেন মহারাজ নরনারায়ণ। আর উত্তর পূর্ব ভারতের তথা আসাম অঞ্চলের গোটায় এলাকা শাসন করির তানে শুক্লধ্বজ কোচবিহারের তুফানগঞ্জ’ত গড় নির্মাণ করেন।
শুক্লধ্বজের মৃত্যুকাল নিয়া মতভেদ আছে। প্রচলিত আছে যে দুতিয়াবার গৌড় আক্রমণ (১৫৭১ খ্রী:) করির সময় চৈত মাসে গঙ্গা নদীর পার’ত মৃত্যু হয় এই বীর যোদ্ধার বসন্ত রোগ’ত আক্রান্ত হয়া।
ইতিহাসবিদ খান আমানাতুল্লা চৌধুরী তাঁর ইতিহাস বইয়োত উল্লেখ করেন, কোচবিহারের তুফানগঞ্জ’ত শুক্লধ্বজ তথা চিলা রায়ের বাসস্থান বা চিলা রায়ের কোটের ধ্বংসাবশেষ এলাও আছে। তার বগলত জালধোয়া গ্রামত আছে আরও একটা দূর্গ। তুফানগঞ্জের বারকোদালিত বড় মহাদেব আর নাককাটিগছ’ত ছোট মহাদেবের মন্দির থাপন করেন চিলা রায়।