কাজিপাড়ায় জমিদার কেরকেরিয়া চারের মন্দিরে শিবচতুর্দশী পালন
সেই জমিদারিও নেই, সেই আভিজাত্য নেই। শিবরাত্রির সলতের মত জমিদারি আমলের আভিজাত্য টিঁকে আছে শুধুমাত্র সামান্য একটু স্থাপত্যে। ধূপগুড়ির কাজিপাড়া গ্রামের কেরকেরিয়া চারের হরি মন্দির জমিদারি আমলের নিদর্শন, ফি বছর শিবরাত্রি উপলক্ষে বসে শিবচতুর্দশীর মেলা ও উৎসব। শিব লিঙ্গে জল ঢালতে পূণ্যার্থীর ভিড়ও জমে। চলে হরিনাম যজ্ঞানুষ্ঠান। তবে সেই অর্থে প্রচারের আলোয় আসেনি কাজিপাড়া কেরকেরিয়া চারের হরি মন্দির।অট্টালিকার তৈরি মন্দিরটি আয়তনে একেবারে কম নয়, প্রকান্ড বটবৃক্ষের পাশে গাদং নদীর ধারে কাজিপাড়া গ্রামে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন কেরকেরিয়া রায়। স্থানীয় জমিদার কেরকেরিয়া রায় সম্পর্কে কথিত আছে যে, তার ঘাড়ে ঝোলানো থাকত কাপড়ের ব্যাগ; তার ভেতর হাত ঢোকালেই নাকি তিনি টাকা বের করতেন। সেই টাকায় তিনি মন্দির নির্মাণ শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দা জগেন রায় বলেন, “মন্দির নির্মাণের কাজ তিনি একাই শুরু করেন, এমনকি নিজের জমিতে ইটভাঁটা খানা তৈরি করে ইট তৈরি করেন। গরুর গাড়িতে করে এথেলবাড়ি থেকে বিহারি কারিগর এনে মন্দির তৈরির কাজ শুরু করেন।” তিনি বলেন, “তাঁর মৃত্যুর পর আমরা গ্রামবাসীরা ক্লাব তৈরি করে সার্বজনীন উদ্যোগে পরে মন্দিরের কলেবর বৃদ্ধি করি।” এই মন্দিরেই শিবরাত্রি উপলক্ষে পঁচিশ বছর ধরে চলছে মহানাম যজ্ঞ এবং শিব চতুর্দশী উৎসব। তবে তার আগে এখানে দূর্গাপূজা হতো। শিব চতুর্দশী উপলক্ষে ব্যাপক ভক্তের সমাগম হয়। আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ব্লকের মালসাগাঁও থেকে আগত পূণ্যার্থী পূর্ণিমা রায় বলেন, “জটেশ্বর শিব মন্দির ও কাজিপাড়া চারের হরি মন্দির এই দুই পূণ্যভূমিতে আমরা প্রতিবছর আসি। দুই জেলার দুই প্রান্তে এই দুটি বড়ো মন্দির নিয়ে মানুষ এখনও কম জানেন।” স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত তালুকদার বলেন, “শিব উত্তরবঙ্গের রাজবংশী, মেচ, বোড়ো বা চা বাগানের জনজাতিদের মূল আরাধ্য দেবতা হিসেবে পূজিত হন। তখন সামন্ততান্ত্রিক সমাজ বহাল ছিল, সম্পদশালী সামন্ত প্রভুরাই মন্দির নির্মাণ করতেন। কেরকেরিয়া রায় স্থানীয় জমিদার, তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দির নির্মাণে উদ্যোগ নেন, সে সময় মন্দিরের কলেবর ও প্রচার খুব কম ছিল।”শিবচতুর্দশীর দিন সকাল থেকেই শিব লিঙ্গে জল ঢালতে ব্যাপক ভিড় জমে। শিব লিঙ্গে জল ঢালতে পূণ্যার্থীদের ব্যাপক ভিড় এদিন দুপুরে দেখা গেল। স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি বাইরের পূণ্যার্থীরাও জল ঢালতে মন্দির চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য মন্তেশ্বর রায় বলেন, “জল্পেশ মন্দির আমাদের মূল পূণ্যভূমি। অনেকে সেখানে পৌঁছতে পারে না, আবার যারা সেখানে পূজা দিয়ে আসেন প্রত্যেকেই এই মন্দিরে এসে আশীর্বাদ নিয়ে যান।”